খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৮ চৈত্র ১৪৩১

বাথরুম থেকে ৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার উদ্ধার

খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ত্রিমুখি চোর-পুলিশ খেলা থামছেই না

বশির হোসেন |
১২:৪৫ এ.এম | ০৬ জুলাই ২০২১

১৩০ শয্যা বিশিষ্ট ককরোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, খুলনায় চলছে ত্রিমুখি খেলা। হাসপাতাল প্রশাসন, কর্মরত নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে চলমান এ খেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। অক্সিজেন-এর ফ্লু মিটার, রোগীদের ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে বার বার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও অদৃশ্য কারনে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে রোগীদের সেবার মান নিশ্চিতে নগরীর অন্য দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে খুমেক হাসপাতাল পরিচালিত করোনা হাসপাতালটি।
সংশ্লি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে অক্সিজেন-এর সংকট তৈরি হচ্ছে। এতে একদিকে হাসপাতালে আউট সোর্সিং কর্মচারীরা জড়িত ঠিক তেমনি রোগীদের একটি অংশ কর্মচারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিলিন্ডার মজুদ করছে। ফলে প্রয়োজনের সময় কারও কাছে বেশি থাকছে আর কেউ অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করছেন। গত রবিবার দিবাগত রাতে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অঞ্জন চক্রবর্তী হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কথা শুনে নিজে গিয়ে করোনা ইউনিটের বাথরুমে গিয়ে ৪৫টি অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার উদ্ধার করেন। এতো সংখ্যক সিলিন্ডার গোপনে জমা রাখায় কৃত্তিম সংকট তৈরি হয় সেখানে। এ ঘটনায় কর্মচারীরা দাবি করেছে, রোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই তারা গোপনে সংরক্ষণ করেছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত একাধিক রোগী বলেছে হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়দের টাকা দিলে সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। যদিও হাসপাতালের আরএমও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে বর্তমানে শতাধিক ফ্লু মিটার মজুদ রয়েছে। অথচ একজন রোগী আসলে ফ্লু মিটার সংকট দেখানো হচ্ছে, গত সপ্তাহে যশোর থেকে আসা এক রোগীর জন্য ফ্লু মিটার না পাওয়ার অভিযোগ উঠে। এ সময় হাসপাতাল পরিচালক-এর চাপের মুখে অবশেষে বাড়ি থেকে এসে ফ্লু মিটার বের করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নার্স। তখন অন্তত ৫০/৬০টি সচল ফ্লু মিটার খুঁজে পান উপ-পরিচালক। যদিও সাথে সাথে বিষয়টি অন্যখাতে নেয়ার চেষ্টা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই।
সময়ের খবরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত সপ্তাহে করোনা ওয়ার্ডে ১২ ধরনের ওষুধ সরকার বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। করোনা ওয়ার্ড থেকে ইনডেন্ট দিয়ে ১২ ধরনের ওষুধ নেয়া হয়েছে রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য। 
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায় ইনজেকশন সেফটিয়েক্সন ৫শ’ পিস, ইনজেকশন মেরাপেনাম ১শ’ পিস, ইনজেকশন ডেক্সা ১ হাজার, ইনজেকশন প্যান্টপ্রাজল ১ হাজার, ইনজেকশন কার্ডিনেক্স ৫০টি, ট্যাবলেট ওমিপ্রাজল ১ হাজার, ট্যাবলেট এজিথ্রোমাইসিন ১ হাজার, ট্যাবলেট সেফ ৫শ’, ভিটামিন সি বা সিভিট ৩৫০টি, ডমপেরিডন ১ হাজার, ইনজেকশন মেট্রো ৬০ পিস ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহের বরাদ্দ হয়। যেহেতু রোগীর তুলনায় সরবরাহকৃত ওষুধ কম, সেই কারণে সবাই সব ধরনের ওষুধ পাবে না তবে রেড জোনে ১৫ জন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন চিত্র। 
হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভর্তি থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব রোগীর ৫ জন জানায় একটি ইনজেকশন ও একটি ট্যাবলেট ছাড়া সব কিছুই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। ৮ জন রোগী একটি ইনজেকশন ও ২টি ট্যাবলেট, দুইজন রোগী একটি ইনজেকশন ও তিনটি ট্যাবলেট বিনামূল্যে পাচ্ছেন বাকি সব কিনতে হচ্ছে। এই ক্রান্তিকালে সরবরাহকৃত সকল ওষুধ যাতে রোগীরা ঠিকমত পায় সেদিকে নজর বাড়াতে হাসপাতাল পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সাধারণ রোগীরা।  
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেড জোনে সোমবার ২০ দিন ধরে চিকিৎসা নেয়া এক রোগীর ইসিজি করার পরামর্শ দেয় কর্তব্যরত চিকিৎসক। ওয়ার্ড বয়কে বললে সে বলেন হাসপাতালের মেশিন নষ্ট একটি নম্বর দিচ্ছি ৫শ’ টাকা লাগবে বাইরে থেকে এসে করে দেবে। 
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেশিন ঠিক আছে এরপর পরিচালক বলেছেন মেশিন নষ্ট নয়। আপনাকে পরিচালক-এর রুমে যেয়ে বলতে হবে মেশিন নষ্ট, সাথে সাথে ওই ওয়ার্ড বয় হারিয়ে যায় এবং অন্য ওয়ার্ড বয় এসে সরকারি মেশিন নিয়ে ইসিজি করার ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে চলছে চোর পুলিশ খেলা।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মহল থেকে পাওয়া অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিনই করণীয় ঠিক করতে চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের বৈঠকে বসছেন হাসপাতাল পরিচালক ও সার্বিক সমন্বয়কারী ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ। তারা কঠোর ভাষায় নিন্দা চাকুরির ভয় ও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলেও তাদের সিদ্ধান্ত তেমন বাস্তবায়ন হচ্ছে না মাঠ পর্যায়ে।
হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান বলেছেন দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি রোগীদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার উদ্ধার হওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান যে রোগীদের হাত থেকে বাঁচাতেই এ কাজ করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। 

্রিন্ট

আরও সংবদ