খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

‘ওষুধের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখ উলে­খ নেই’

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে ‘বাংলাদেশের সরকারি’ ওষুধ, তোলপাড় : তদন্তে স্বাস্থ্য ভবন

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৬ এ.এম | ০৭ এপ্রিল ২০২২


পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের বাংলাদেশের সরকারি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এর পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবন। বুধবারও বিষয়টি নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনন্দবাজার অনলাইন। এসব প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়, মেদিনীপুরের সরকারি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা ‘বাংলাদেশের সরকারি’ ওষুধের মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখ উলে­খ নেই। কীভাবে এই ওষুধ দেশটির সরকারি স্টোরে ঢুকল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে এই ওষুধ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছেছিল। সেই স্টোর কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন। মঙ্গলবার রাতে এমন দাবি করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। খবর আনন্দবাজারের।
আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখানোর পর প্রেসক্রিপশনে লেখা অনেক ওষুধই সরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় রোগীদের। সেভাবেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন রোগী ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল নামে একটি ওষুধ পান। সেই ওষুধ হাতে পেয়েই চমকে ওঠেন তারা। ওষুধের গায়ে বাংলায় লেখা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয় বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’। এমনকি, ওই ওষুধ তৈরি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের কোনো তারিখ মোড়কের গায়ে লেখা ছিল না। এর পরেই ওই ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ কীভাবে এ রাজ্যের হাসপাতালে সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে গেল, কীভাবেই বা তা সরকারি হাসপাতালে পৌঁছল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি। এমন ঘটনা আগে কখনও শোনেননি বলে দাবি করেন দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাস। তার বক্তব্য, ‘ভারতে উৎপাদিত ওষুধের পরিবর্তে আচমকা বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ কেন আনা হয়েছে তা আমাদের জানা প্রয়োজন। তা ছাড়া এই ওষুধের উৎপাদন বা মেয়াদের তারিখ কেন উলে­খ নেই, তা নিয়েও প্রশ্ন জাগছে। ইতিমধ্যে কাঁথি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওগুলি সরকারি ভাবে সাপ্লাই হয়েছে।’
এই ওষুধ বাংলাদেশ থেকে কোন পথে ভারতে গেল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে বাংলাদেশ সরকারের ওই ওষুধগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে ওই ওষুধ স্টোরে এসেছিল তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমরা জানতে পেরেছি ওই ওষুধ কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোর থেকে কাঁথির হাসপাতালে গিয়েছিল। এর উৎস খোঁজার চেষ্টা করছি।’
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, তমলুক জেলা সদর হাসপাতালের মূল স্টোর থেকে বাংলাদেশি ওষুধ কাঁথি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা স্টোরে ওষুধগুলো এসেছিল কলকাতার সেন্ট্রাল স্টোর থেকে। স্বাস্থ্য দফতরের ওই সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে কিছু ওষুধ রাজ্যে এসেছিল। তবে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ আমদানি হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কারো স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই কাঁথির সরকারি হাসপাতালের ওষুধের ভাণ্ডারে সেই সময় আনা পুরনো ওষুধ পৌঁছেছে কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
জেলা স্তরেও এই বিষয় খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসার পর প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কলকাতার সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে ওই ওষুধগুলো এসেছিল। তবে আসলে কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য জেলার ডেপুটি মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই পরিষ্কার হবে, ওষুধগুলো নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা। তার আগে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

্রিন্ট

আরও সংবদ