খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

রোজা হাজারো রোগের চিকিৎসা (পর্ব-১)

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:৪৮ এ.এম | ০৮ এপ্রিল ২০২২


রোজার উপকারিতা প্রমাণ করে ২০১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন জাপানি জীব বিজ্ঞানী ইয়োশিনরি ওসুমি। রোজার মাধ্যমে মহান খোদা তায়ালার ইবাদত তো হয়েই যায়, সাথে সাথে অগণিত শারীরিক উপকারিতা লাভ করে থাকে। রোজা হাজারো রোগের ঔষধ। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও রোজার রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মূলত শ্বেত রক্তকণিকা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। রোজা রাখার ফলে পুরানো শ্বেত রক্তকণিকাগুলো পুনরায় উজ্জেবিত হয় এবং আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
২। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় : আজকাল স্বাস্থ্যসচেতন বন্ধুরা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়া নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। রোজা তাদের জন্য সুসংবাদ। স¤প্রতি কার্ডিওলজিস্টদের গবেষণা মোতাবেক, রোজা রাখার ফলে দেহে হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস পায়। এই গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে, যারা নিয়মিত রোজা থেকেছেন তাদের দেহের লিপিড প্রোফাইল একদম স্বাভাবিক। অর্থাৎ, তাদের রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে যেকোন হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট এ্যাটাকের মতো ঝুঁকি অনেক কম।
৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের গ্লুকোজ ও শর্করা জাতীয় খাবারের দ্রুত ক্ষয় হয় এবং তা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগান দেয়। ফলে ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় এবং তা প্যানক্রিয়াসকে খানিকটা বিশ্রাম দেয়। গ্লুকোজ ক্ষয়ের ফলে শরীরে ব্লাডসুগার কমে ডায়বেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে, রোজা টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী।
৪। স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় : হাজারো পীর-মাশায়েক এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে রোজার ফলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়। বিখ্যাত ডাক্তার দেওয়ান এ কে এম আব্দুর রহীম বলেছেন, রোজাব্রত পালনের কারণে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়। ফলে স্মরণশক্তি বেড়ে যায়।
৫। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি : গবেষণায় দেখা গেছে, রোজায় পর্যাপ্ত মানসিক বিকাশ অর্জনের ফলে মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধিসাধন হয় এবং মস্তিষ্ক আরো কর্মক্ষম হয়।
৬। বিষাক্ত পদার্থ দূরিকরণ : রোজায় পানাহার থেকে বিরত থাকার ফলে দেহ দূষিত পদার্থ বের করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পায়। এর ফলে পরিপাকতন্ত্র সচল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। একই সাথে দেহ থেকে যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। এই প্রক্রিয়ার নাম ডিটক্সিফিকেশন। ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দেহকোষে জমে থাকা ফ্যাট বার্ন বা দহনের পাশাপাশি দেহের যাবতীয় টক্সিন অর্থাৎ বিষাক্ত পদার্থও ধ্বংস হয়ে যায়।
৭। ওজন কমাতে কার্যকরী : স্থু’ল মেদ ও দেহের মাত্রাতিরিক্ত ওজন একটি রুটিন সমস্যা। রোজা থাকার ফলে আমাদের দেহ তার প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণের জন্য দেহের বিভিন্ন ফ্যাটি টিস্যু এবং মাংসপেশী ও লিভারে জমে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজ বার্ন করে দেয়। এর ফলে দেহের ওজন হ্রাস পায় এবং শারীরিক গঠন স্বাভাবিক ও সুঠাম হয়। জর্ডানের ৬০ জন স্বাস্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির উপর চালানো গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে, এক মাস রোজা থাকার ফলে তাদের দেহের ওজন হ্রাস পেয়েছে।
৮। বিপাকে সহায়ক : রোজা রাখার ফলে আমাদের লিভারে থাকা এনজাইমগুলো ভেঙে কোলেস্টেরলে পরিণত হয়। একই সাথে দেহে জমে থাকা ফ্যাট বার্ন হয়ে বাইল এসিড এ রূপান্তরিত হবার ফলে দেহে তাপ উৎপন্ন হয়। এর ফলে দেহে মেটাবলিজম বুস্ট হয় এবং ক্ষুধা কম লাগে। জেনে রাখা দরবার, বাইল এসিড হচ্ছে লিভার বা যকৃত দ্বারা তৈরি একপ্রকার এসিড। এটি পিত্তের সাথে কাজ করে দেহের ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে।
৯। পুষ্টি শোষণে উপকারী : দীর্ঘসময় ধরে রোজা রাখায় এবং গভীর রাতে সাহরী করার ফলে আমাদের দেহে অ্যাডিপোনেক্টিন নামক একটি হরমোন তৈরি হয়। এর ফলে আমাদের বিপাকক্রিয়ার কার্যকারিতা আরো সচল হয় এবং আমাদের দেহ এবং মাংসপেশী খাদ্য থেকে বেশি পুষ্টি শোষণে সক্ষম হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী তার “সুপিরিয়র নিউট্রিশন” গ্রন্থে ডাঃ শেলটন বলেছেন, উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করা জাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর পুষ্টি বিধান হয়।
রোজার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে ইনশাআল­াহ।
(লেখক : মৎস্যবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।

্রিন্ট