খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

রোজার শেষ দশক: অল্প আমলে অশেষ নেকী অর্জনের কৌশল

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
১২:৫৮ এ.এম | ২৩ এপ্রিল ২০২২


চলছে রোজার শেষ দশক। আমরা সকলেই জানি, এই দশকেই রয়েছে শবে কদর। এই শবে কদরের এক রাত আমল করলে এক হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাসেরও বেশি ইবাদত করার ছওয়াব প্রাওয়া যাবে। কারণ, এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল­াহ তায়ালা বলেন, কদরের রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম (সূরা কদর)। অনেক সময় খুব ছোট আমল করলেও অগণিত ছওয়াব পাওয়া যায়। নিম্নে কিছু কৌশল বা টিপস দেয়া হলো যার মাধ্যমে আমরা সীমাহীন ছওয়াব হাসিল করতে পারবো। তাহলে আমরা শবে কদরকে বিরল পুঁজি মনে করে কয়েকটি আমল করতে পারি। যেমন :
এক. হাজার বছর নামাজের ছওয়াব :
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা, উদাহরণ স্বরূপ : ২ রাকাত করে শবে কদরের তালাশে নফল নামাজ পড়ি তাহলে আমরা একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়লে যে ছওয়াব পাওয়া যেতো সেই সম পরিমাণ ছওয়াব কামায় করতে পারবো। কারণ যে কোন এক দিনের নামাজ শবে কদরের রাতের মধ্যেই থাকবে।
দুই হাজার বছর দানের ছওয়াব :
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা, উদাহরণ স্বরূপ : ১০ টাকা করে দান করি তাহলে আমরা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস একটানা প্রতিদিন ১০ টাকা করে দান করার ছওয়াব পাবো। কারণ এই দানের একটি দিন অবশ্যই শবে কদরে পড়বে।
তিন. সহস্র কুরআন খতমের ছওয়াব :
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে যদি আমরা ৩ বার সূরা এখলাস বা ক‚লহু.. সূরা পড়ি, তাহলে আমরা ইনশাআল­াহ ৮৩ বছর ৪ মাসেরও বেশি একটানা প্রতিদিন কুরআন খতমের ছওয়াব পাবো। কারণ শেষ ১০ দিনের যেকোন একদিন শবে কদর অবশ্যই হবে। হাদিসে এসেছে, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য (বুখারি)। অর্থাৎ এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়। তাহলে আমরা যদি ৩ বার সূরা এখলাস পড়ি তাহলে এক খতম কুরআনের ছওয়াব মিলবে। এই আমলটি আমরা সহজেই করতে পারি। প্রতি রাতে ৩ বার সূরা এখলাস পড়তে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগবে।
চার. অজস্র কবুল হজের ছওয়াব :
রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি রাতে মায়ের দিকে একবার নেক নজরে তাকালে আমরা একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন কবুল হজের ছওয়াব পাবো। কারণ একবার মায়ের দিকে নেক নজরে তাকালে একটি কবুল হজের ছওয়াব পাওয়া যাবে বলে হাদিসে উলে­খ আছে। শুধু তাই নয়, আমরা যতবার তাকাবো ততোটি কবুল হজের ছওয়াব পাবো ইনশাআল­াহ। এর সঙ্গে গুণ করুন আরও ৮৩ বছর ৪ মাস। সুবহানাল­াহ! এই ছওয়াব কেউ কি হিসেব করতে পারবো?
পাঁচ. হাজার বছর পূর্ণরাতের ইবাদতের নেকী :
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে তার জন্য সারা রাত (নফল) নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে (তিরমিজি)। তাহলে রমজানের শেষ ১০ দিন আমরা এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে পড়লে একটানা ৮৩ বছর ৪ মাস রাত জেগে ইবাদতের ছওয়াব পাবো। কারণ রমজানের শেষ ১০ দিনের একটি দিন শবে কদরে পড়বে।
ছয়. হাজার বছর জিহাদের ছওয়াব :
হাদিসে বর্ণিত আছে, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল­াহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দন্ডায়মান ও দিনে সিয়াম পালনকারীর মতো (বুখারি)। তাহলে আমরা যদি রমজানের শেষ ১০ দিন প্রতি রাতে কোন বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্যক্রয় বাবদ কিছু টাকা প্রদান করি তাহলে একটানা ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস আল­াহর পথে জিহাদকারীর মতো অথবা রোজা পালনকারীর মতো ছওয়াব পাবো।
সাত. সৃষ্টির সমপরিমাণ নেকী হাজার বছর :
হাদিসে এসেছে যে এই দোয়া পড়বে, সুবহানাল­হি ওয়া বিহামদিহী, আদাদা খলকিহী, ওয়া রিদ্ব নাফছিহী, ওয়া যিনাতা আরশিহী, ওয়া মিদাদা কালিমাতিহী; অর্থাৎ হে আল­াহ আমি তোমার পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ, তোমার সন্তুষ্টি পরিমাণ, তোমার আরশের ওজন পরিমাণ এবং তোমার কালিমাসমূহের পরিমাণ; তাহলে সে সমস্ত সৃষ্টির সংখ্যা পরিমাণ ছওয়াব পাবে। এই আমলটি যদি আমরা প্রত্যেক রমজানের শেষ দশকের প্রতি রাতে করতে পারি তাহলে ন্যূনতম ৮৩ বছর ৪ মাস একটানা সৃষ্টির সমপরিমাণ নেকী কামায় করতে পারবো। কারণ শেষ দশকের একদিন অবশ্যই শবে কদর হবে ইনশাআল­াহ।
পরিশেষে বলতে হয়, যে কোন আমলের নেকী কোটি কোটি গুণ বাড়ানো সম্ভব, যদি নিয়তকে পরিশুদ্ধ ও প্রশস্ত করা যায়, যেমন উপরোক্ত হাদিস থেকে জানা গেলো।
(লেখক : মৎস্যবিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

্রিন্ট