খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মুজিব বর্ষে উপহারের ঘরে ধস জড়িতদের কাউকেই ছাড় নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১০:০২ এ.এম | ১০ জুলাই ২০২১

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে লক্ষাধিক গৃহহীন মানুষকে ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা। এ বছরের মধ্যে আরও এক লাখ মানুষ ঘর পাওয়ার কথা রয়েছে। নিঃসন্দেহে সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এটি। একসঙ্গে এত মানুষকে বিনা মূল্যে ঘর দেওয়া যেকোনো বিবেচনাতেই একটি বড় ঘটনা। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের দুর্নীতি, অবহেলা ও অনিয়মের কারণে গোাঁ কার্যক্রমটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ রীতিমতো তামাশায় পরিণত হয়েছে।

বিভিন্ন গনমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রাজধানীর পার্শবর্তী মুন্সিগঞ্জে জেলার গজারিয়ায় বালুয়াকান্দি ইউনিয়নে তৈরি করা হয় ২৮টি টিনশেড ঘর। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে একটি ঘরের ইটের গাঁথুনি ধসে পড়েছে। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে আরও কয়েকটি। এর আগে টানা বৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা গোপালগঞ্জ সদরে উরফি ইউনিয়নের মধুপুর আশ্রয়ণের দুটি ঘর ভেঙে যায়। একইভাবে বগুড়ার শেরপুরে খানপুর ইউনিয়নে ২২টি ঘরের মধ্যে ৮টিই ধসে গেছে। এমনকি হস্তান্তরের আগেই বৃষ্টিতে ধসে পড়েছিল কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পাঁচটি ঘর। কয়েক দিন পরপর বিভিন্ন জেলা থেকে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে উপকারভোগীদের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।

এসব প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকে ছিল নানা অভিযোগ। ঘর বরাদ্দ নিয়ে চাঁদাবাজি ও অবৈধভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে অনেক জায়গায়। কাজ হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে অনেককে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থান নির্বাচন ও কাজের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। যেমন অনেক খাসজমি থাকা সত্ত্বেও গজারিয়ার অধিকাংশ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে নদীর ধারে। বন্যায় ঘরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ, খাওয়ার বিশুদ্ধ পানি ও রান্না করার ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগও উঠেছে। গজারিয়ায় ২৮টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি পরিবার সেখানে থাকছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের পরিপূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ঘরেই থাকছে না অনেক পরিবার। ঘর বরাদ্দ বাতিলের ভয়ে দিনে কিছু সময় কাটিয়ে যান তাঁরা। এমন জগাখিচুড়ি চিত্র অনেক জায়গায়।

একেকটি ঘর তৈরির পেছনে সরকারের খরচ পড়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। সেই ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সরকারি বরাদ্দ পানিতে যাওয়া। অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ, বরগুনা, বগুড়া ও মুন্সিগঞ্জ থেকে প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও এমন প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিদের্শে পৃথক পাচঁটি তদন্ত দল সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেছে। আমরা আশা করব, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কেউই ছাড় পাবেন না।
 

্রিন্ট