খুলনা | বুধবার | ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

ভোজ্য তেলের কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে

|
১২:১৫ এ.এম | ১৩ মে ২০২২


ঈদের আগে বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট, দাম বাড়ানোর পর তেলের প্রচুর সরবরাহ এবং মজুতবিরোধী সরকারের অভিযানের বিষয়টি কেবল অস্বাভাবিক নয়, অবিশ্বাস্যও বটে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে তিনি ভুল করেছেন। তাঁর এই সামান্য ভুল যে কত অসামান্য ক্ষতি ডেকে এনেছে, তা মন্ত্রী উপলব্ধি না করতে পারলেও ভোক্তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। অন্যদিকে এই সুযোগে ভোজ্যে তেলের খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মিলার-ডিলাররা ভোক্তা সাধারণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঈদের বেশ আগে থেকে আমদানিকারকেরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। এর মাত্র কয়েক দিন আগেই তেলের দাম এক দফা বাড়ানো হয়। রোজার দিনে নতুন করে দাম বাড়ালে জনগণের মধ্য বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে সরকার ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। নীতি-নির্ধারকদের পক্ষ থেকে ঈদের পর দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগই নিয়েছেন এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এক লাফে সয়াবিনের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়েছেন।
এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের রপ্তানি বন্ধ করে দেয় এবং আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল রপ্তানি কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশ মূলত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে ভোজ্য তেল আমদানি করে থাকে। ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা এনে দেয়। মিল মালিকেরা সরবরাহ কমিয়ে দেন, ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বেশি লাভের আশায় উলে­খযোগ্য পরিমাণ তেল মজুত করেন। ফলে ঈদের দুই দিন আগে বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে যায়।
এরপর দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তেলের শূণ্য ড্রামগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার লিটার সয়াবিন ও পাম তেল উদ্ধার করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, যে পরিমাণ ভোজ্য তেল জব্দ হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মজুত করা হয়েছিল। সবখানে অভিযান চালানোর সক্ষমতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেই। ফলে মজুত তেল উদ্ধার করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সর্বাত্মক অভিযান চালানোর বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে যারা বেশি দাম পাওয়ার আশায় ভোজ্য তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, তিনি ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছেন। তাঁরা কথা রাখেননি। কিন্তু তিনি কীভাবে ভাবলেন তাঁরা কথা রাখবেন? ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন মুনাফার জন্য। মন্ত্রীর হিতোপদেশ বা সতর্কবাণীতে যে কোনো কাজ হয় না, তা ফের প্রমাণিত হলো। যদি ঈদের আগে সরকার বাজার তদারকি ও নজরদারি বাড়াত, তাহলে ব্যবসায়ীরা মজুতদারির সুযোগ পেতেন না।
আমরা পুরো বিষয়টির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। কেবল দোকানদার নয়, বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় তেল নিয়ে তেলেসমাতি চলতেই থাকবে। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে অন্য কোনো পণ্যকে উপলক্ষ্য করে ক্রেতা-সাধারণের পকেট কাটতেই থাকবেন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ