খুলনা | রবিবার | ২৫ মে ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঐতিহাসিক চুকনগর গণহত্যা দিবস আজ

শেখ আব্দুস সালাম, ডুমুরিয়া |
০১:৪৩ এ.এম | ২০ মে ২০২২


ঐতিহাসিক “চুকনগর গণহত্যা দিবস” আজ। খুলনা শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পশ্চিমে ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত এবং ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী এ অঞ্চল। চুকনগর গণহত্যা একটি সামরিক গণহত্যা, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে ২০ মে সংঘটিত করে। এই গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত বৃহৎ হত্যাকান্ড। এতবড় নারকীয় হত্যাকান্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
চুকনগর ভারতীয় সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পর বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন সীমান্ত অতিক্রমের জন্য এখানে এসে জড়ো হয়। বস্তুত ভদ্রা, কাজীবাছা, খড়িয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভৃতি নদী ও শাখানদী পথে এবং কাঁচা রাস্তায় দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রামপাল, তেরখাদা ও ফকিরহাট থেকে খুলনার ডুমুরিয়া হয়ে চুকনগর ছিল সে সময়কার বিবেচনায় ভারতমুখী সর্বাধিক নিরাপদ রুট। অসংখ্য নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ও সংকীর্ণ কাঁচা মাটির এই পথে আর্মি কনভয় চলাচল সম্ভব ছিল না। ফলে লোকজন এই পথ বেছে নিতো। চুকনগর ছিল ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’। আটলিয়া ইউনিয়নের এই এলাকা ছিল খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরার মিলন বিন্দু এবং সেই আমলের সমৃদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। ভারতের পথে শ্রান্ত ক্লান্ত লোকজন বিশ্রাম, সীমান্ত পর্যন্ত পরবর্তী পথের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া এবং গাইড ও যানবাহনের সন্ধানে এখানে থামতো। এখান থেকে ভারতে যাওয়ার মূল রুট ছিল মঙ্গলকোট-সরসকাটি-কলারোয়া হয়ে হাঁটা পথে। ফলে নৌকা এবং বিভিন্ন জিনিষপত্র পানির দামে বেঁচে দিয়ে তাদের হালকা হতে হতো। চুকনগরে মানুষের কাফেলা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু মে’র তৃতীয় সপ্তাহে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রামপাল, ডুমুরিয়া প্রভৃতি এলাকা প্রায় একযোগে আক্রান্ত হওয়ায় গ্রাম কি গ্রাম উজাড় করে লোকজন চলে আসতে থাকে। বস্তুত সেদিন আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর বাজার, চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, স্কুল, পুঁটিমারী, মালতিয়া, রায়পাড়া, দাসপাড়া, তাতিপাড়া প্রভৃতি গ্রাম, পাতোখোলা বিল এবং ভদ্রা ও ঘ্যাংরাইল নদীর পাড়ে ও নৌকায় অগুণিত মানুষ ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার জন্য গাইড এবং যানবাহনের অপেক্ষায় ছিল। পুরো এলাকাটা ছিল প্রায় এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের। ২০ মে বেলা ১১টায় মিলিটারির দু’টি দল একটি ট্রাক ও একটি জিপ গাড়িতে এসে চুকনগর বাজারের উত্তর প্রান্তে থামে। পাতখোলা বাজার থেকে তারা গুলি চালনা শুরু করে এবং পরবর্তীতে চুকনগর বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। বিকেল তিনটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলতে থাকে। চুকনগরে মৃত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা না গেলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মৃতের সংখ্যা ১০ থেকে ১২ হাজারের মত। মৃতদেহগুলো পাক বাহিনী নদীতে নিক্ষেপ করে এবং পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন অবশিষ্ট দেহগুলোর অধিকাংশ নদীর পানিতে ফেলে দিতে বাধ্য হন। হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে চুকনগরে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে যা “চুকনগর শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ” নামে পরিচিত।

্রিন্ট

আরও সংবদ