খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

সতেজ থাকার ১৪ উপায়

ডাঃ শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা |
০১:২০ এ.এম | ০৯ জুন ২০২২


ঘরে কিংবা বাইরে প্রতিটি দিন আপনি কতই না কাজ করেন। ২৪ ঘন্টার প্রতিটি মিনিট প্রতিটি সেকেন্ড নানা কর্ম ব্যস্ততা বা কর্মহীনতার দুর্ভাবনার যাঁতাকলে হয়তো আপনি আপনার আমিকেই  হারিয়ে ফেলেন। হারিয়ে ফেলেন জীবনের সজীবতা। যে যে কারণে ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক স্ট্রোক প্রভৃতি রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধে তার মধ্যে জীবন-যাত্রার ভারসাম্যহীনতা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাবক। তাই জীবনকে সহজ করতে হবে। আর সহজ করার জন্য শরীর ও মনের সতেজতার কোন বিকল্প নেই।
আমরা জানবো সতেজ থাকার জন্য আপনি কি কি করতে পারেন? সাথে সাথে কোনটি কেন করবেন তার মেডিকেলীয় ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলো :
১. ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করুন। এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এ সময় নিঃসৃত হয় দামী একটি হরমোন কর্টিসল। স্মৃতিশক্তির স্থায়িত্ব, কাজের পরিকল্পনা, শরীরের  বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, রক্তে গ্লুকোজ-এর সমতার সবকিছুর পেছনে কর্টিসলের রয়েছে অনন্য ভূমিকা। আর ঘর হতে আঙিনায় দাঁড়ালেই পর্যাপ্ত পরিষ্কার বাতাস,সবুজ প্রকৃতি, বুক ভরা অক্সিজেন, সূর্যের আলোয় ভিটামিন ডি। সারাদিনের কর্ম পরিকল্পনার ছকটি একবার চোখে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিতে ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার কোন বিকল্প নেই।
২. প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করুন। এই অভ্যাস বিপাকীয় হারকে প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। আর এটি করলে তা খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমাতে সাহায্য করে। 
৩. সকালে অন্তত ১০ মিনিট হাটাহাটি/ব্যয়াম করুন। এসময় প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার শরীর থেকে নিঃসৃত হবে সেরোটোনিন, যা হলো মেজাজ ভালো করার হরমোন। আর শরীর চর্চার অন্যান্য উপকারিতা তো রইলোই।
৪. সকালে গোসল করার অভ্যাস করুন। সারাদিন আপনার ঝরঝরে অনুভুতি হবে।
৫. নির্দিষ্ট সময়ে আহার করুন। চেষ্টা করবেন যেন খাওয়ার সময় একই থাকে। প্রতিদিন  নিয়মিত সময় খাবার খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্র ভালোভাবে কাজ করবে। সতেজ থাকার জন্য এটি খুব দরকার। খাবারের ক্ষেত্রে শাকসবজি ও ফল,বিশেষ করে শশা। গরম কালে নিয়মিত ফল ও শশা খাওয়ার ফলে ঘাম কম হবে, পিপাসা কম  লাগবে, ঘামের দুর্গন্ধ কম হবে।
৬. প্রাণ খুলে হাসুন। অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করুন। এসব কাজের জন্য ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত হয়।এই হ্যাপী হরমোন হলো একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে চালিত করে। দেখবেন- যাদেরকে সুখী মনে হয়, তারা মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন বা হাস্যোজ্জ্বল মুখে কথা বলেন। দিনের কিছুটা সময় সৃজনশীল বা কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে জড়াতে পারেন।
৭. মৌসুমী ফলের জুস, লেবুর সরবত,ডাবের পানি খেতে পারেন। এর পাশাপাশি ডাবের পানি দিয়ে মুখ ও ধুয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বকে সতেজতা ফিরে আসে।খিদা পুষে রাখবেন না। নিজের সাথে টুকটাক খাবার, বিস্কুট, ফল, জুস রাখবেন। যেন অল্প সময়ে খেতে পারেন। হাতের কাছে  সবসময় পানি রাখবেন। কিছু সময় পর পর পানি পান করতে পারেন।
৮. চেষ্টা করবেন সব সময় পরিপাটি থাকার। তাহলে কাজে পূর্ণ মনোযোগ আসবে। কাজের মাঝে ৩/৪ বার মুখ ধুয়ে হালকা ক্রিম অথবা পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। যেন আপনার সতেজ ভাবটি হারিয়ে না যায়, ক্লান্তির ছাপ মুখে পরতে দিবেন না। তবে অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। মাঝে মাঝে মুখ ধুয়ে যেকোনো মশ্চারাইজার ক্রীম মেখে বসে থাকুন। আপনার ত্বক শ্বাস নিক।
৯. হালকা সুতি বস্ত্র পরিধান করুন। বাইরে গেলে রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা এবং রোদ চশমা ব্যবহার করুন। বাইরে রোদ থেকে এসে গোসল করে নিবেন। সকল ক্লান্তি কেটে যাবে। নিজেকে সতেজ অনুভব করবেন।
১০. কর্মব্যস্ততা পরিষ্কার শৌচালয়ের অভাবে অনেকেই বাইরে গেলে পেশাবের বেগ বা মূত্রনালী চেপে রাখেন। প্রস্রাব বেশিক্ষণ চেপে রাখলে এ সকল ক্ষতিকর পদার্থ কিডনিতে যেয়ে পরবর্তীতে স্টোন তৈরি করতে পারে।
১১. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো দেহের সতেজতার অপরিহার্য অঙ্গ। ঘুম ঠিক ভাবে না হলে আমাদের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। চোখের নিচে কালো দাগ পরে, মুখে ব্রন দেখা দেয়, ত্বকের লাবন্যতা হারিয়ে যায় । তাই ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে অবসর সময় ঘুমিয়ে নিন।
১২. সময় সুযোগ হলে কোন সুন্দর, প্রাকৃতিক স্থানে  ঘুরতে যাওয়া। ভ্রমনের মাধ্যমে আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন। ঘুরতে গেলে আপনার সব মানসিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে । ফিরে এসে আপনি পাবেন সতেজ   অনুভুতি।
১৩. পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিন। ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করুন।
১৪. নেগেটিভ স্ক্রিন টাইম কমান।ফেসবুক মিডিয়ার অন্য মানুষের সুখী জীবনের মতো কেন আপনার জীবন নয় এমন ভাবনা , অন্যের ফেসবুকে স্পাই হয়ে বা নীরব দর্শক হয়ে পর্যবেক্ষণ করা, হায়হুতাশ করা থেকে বিরত থাকবেন। এই একটি কাজ আপনাকে আপনার জীবনযাত্রার মানকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দেবে।
আপনার জীবন আপনার, আপনার জীবন সুন্দর করার জন্য আপনার হাতেই অজস্র উপাদান রয়েছে বিশ্বাস করুন একটু খুঁজে দেখলেই পাবেন, খুঁজে দেখুন। যখন খুঁজে পাবেন তখন আপনাকে সব কিছু ভালো লাগবে,আপনার বিরক্তিকর ভাব দূর হবে। সব কিছু প্রাণবন্ত মনে হবে। কোন কঠিন কাজ করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। সতেজতা আপনাকে সাহায্য করবে ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি তৈরি করতে। আপনি অনুভব করবেন, আপনার সুন্দর চোখে দেখা পৃথিবী কত সুন্দর।
নির্দিষ্ট সময়ে আহারে এই পয়েন্টে বাদে আমি কমবেশি সবগুলোই মানি। আপনি কি কি মানেন বা আজ থেকে কি কি মানতে চান , কোনোটা মানতে গিয়ে আপনার শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কিনা তা কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। চেষ্টা করবো উত্তর দেবার। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন, সুস্বাস্থ্যের সাথে থাকুন। 
লেখক : সিভিল সার্জন কার্যালয় খুলনার এম ও সি এস।

্রিন্ট

আরও সংবদ