খুলনা | রবিবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

‘ভাই’ সম্বোধন মৌসুমীর, সে স্টিল নাও আমার স্ত্রী : সানী

জায়েদ খান আমার ব্যবসারও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন : মৌসুমীর ছেলে

খবর বিনোদন |
০১:১১ এ.এম | ১৪ জুন ২০২২


দেশের চলচ্চিত্রপাড়া এখন বেশ উত্তাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নানা আলোচনা। চিত্রনায়িকা মৌসুমী, ওমর সানি এবং জায়েদ খানকে নিয়েই মূলতঃ ঘটনা। স¤প্রতি ওমর সানি অভিযোগ করেন, জায়েদ খানের কারণে তাদের সংসারে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এমন কি মৌসুমীকে নানা মাধ্যমে বিরক্ত করছেন তিনি। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ লিখিত আকারে সানি জমাও দিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে। বিচার চেয়েছেন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে।
দু’দিন ধরে আলোচনা-সমালোচনা যাকে নিয়ে এই দুই চিত্রনায়ক দ্ব›েদ্ব জড়ান সেই চিত্রনায়িকা মৌসুমী এতদিন ছিলেন নিশ্চুপ। অবশেষে মুখ খুললেন মৌসুমী। 
এ অবস্থায় মৌসুমী এক অডিও বার্তায় জানান, তাকে কখনো অসম্মান বা উত্ত্যক্ত করেনি চিত্রনায়ক জায়েদ খান। একই সঙ্গে তার স্বামী ওমর সানী কেন এই প্রসঙ্গ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন, সেটা জানেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এই চিত্রনায়িকার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি আমার প্রসঙ্গটা টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমি জায়েদকে অনেক স্নেহ করি ও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে। আমাদের মধ্যে যতটুকু কাজের সম্পর্ক, সেটা খুবই ভালো একটা সম্পর্ক। সেখানে ও আমাকে অসম্মান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর ওর মধ্যে গুণ ছাড়া এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে এমন কিছুই আমি দেখিনি। তারপর বলব ও অনেক ভালো ছেলে। সে কখনই আমাকে অসম্মান করেনি।’
মৌসুমী বলেন, ‘কেন এই প্রশ্নটা বার বার আসছে, সে আমাকে বিরক্ত করছে-উত্ত্যক্ত করছে, এই জিনিসটা আমার আসলে...জানি না এটা কেন হচ্ছে। এটা যদিও একান্ত আমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা। সে সমস্যা আমাদের পারিবারিক ভাবেই সমাধান করা দরকার ছিল।’
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে জায়েদের খুব একটা দোষ আমি পাইনি। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাকে ছোট করার মধ্যে আমাদের... যাকে আমরা অনেক শ্রদ্ধা করে আসছি সেই ওমর সানী ভাই কেন এত আনন্দ পাচ্ছেন-সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমার কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই আমার সঙ্গে সমাধান করবে, সেটিই আমি আশা করি। ’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মৌসুমী আরও বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক ভাইরা আসলে একটা নিউজ পেলে, কথা না বলেই প্রকাশ করেন। এটা আসলে ঠিক না। এটা আসলে আলোচনা করা উচিত। যেহেতু আমার প্রসঙ্গ আসছে, তাই বিষয়টি আমার সঙ্গে আলোচনা করে নিতেন, তাহলে হয়তো প্রসঙ্গটা লিখতেনই না। তিনি (সানী) আসলে এক তরফা বলেছেন, কিন্তু আমি বলেছি কি-না, আমি অভিযোগ করেছি কি-না; জানাটা খুব বেশি জরুরি ছিল।’ ওই অডিওতে স্বামী ওমর সানিকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে বলতে শুনা যায় মৌসুমীকে।
অপর দিকে মৌসুমীর এমন বক্তব্যের বিপরীতে মুখ খুললেন ওমর সানী। তিনি স্যোশাল মিডিয়াতে বলেন, ‘আমি যা বলেছি স্পষ্ট করেই বলেছি। আমি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলতে চাই। আমার পরিবারের প্রতি, মৌসুমীর প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধা আছে। সে যা বলেছে, কি ভেবে বলেছে আই ডোন্ট নো। এ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন যাবৎ একটু দূরত্ব তো চলছিল। চেষ্টা করছিলাম।’
সানী আরও বলেন, ‘আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি আমার পরিবারকে। ২৭ বছর ধরে শ্রদ্ধা করে এসেছি এবং বাংলাদেশের মানুষও জানে। আমার ব্যাডলাক যে ২৭ বছর পরে এসে আমার শ্রদ্ধার জায়গাটায় কী গুনাহ করলাম আমার পরিবারের সবাই, তা আমরা জানি না। আমি বার বার একটা কথায় বলেছি আমার এবং আমার ছেলে ফারদিনের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ আছে। আমার পরিবারের পাঁচজন সদস্য, আমি, মৌসুমী, আমার ছেলে ফারদিন, বউমা আয়েশা, মেয়ে ফাইজা। কিন্তু আপনারা ভালো জানবেন, ফোন রেকর্ড অনুযায়ী তার সাথে আমার ফোনেও কথা হচ্ছিল না। আমি তার ব্যাপারে মন্দ কথা, খারাপ কথা কিছুই বলবো না। কারণ সে স্টিল নাও আমার স্ত্রী।
মৌসুমীর বক্তব্যের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে সানী বলেন, ‘কিন্তু এগুলোর উত্তর আমার এবং আমার ছেলের কাছে আছে ছেলেটার (জায়েদ খান) ব্যাপারে। এর যথেষ্ট প্রমাণ ফারদিন এবং ফাইজার কাছে আছে। ফাইজা এবং ফারদিন বাকি উত্তরগুলো দেবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে তার মা’র সঙ্গে কী উত্তর দেবে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে। আমি কিছু বলতে চাই না।’
এরপর সানি-মৌসুমী দম্পতির ছেলে ফারদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু আমার আম্মা না, উনি (জায়েদ খান) কমবেশি সবাইকে বিরক্ত করেন। আমি জানি বিষয়গুলো। কিন্তু পাবলিকলি সব বলবো না। জায়েদ খান আমার ব্যবসারও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন।’
কিন্তু জায়েদ খানকে নিয়ে মৌসুমীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারদিন বলেন, ‘এটা নিয়ে যেন এত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি না হয়, সেই চিন্তা থেকেই আম্মু কথাগুলো বলেছেন। যেন বিষয়টা দ্রুত ঠান্ডা হয়। এক জায়গায় দেখলাম আম্মু না কি বলেছেন, মিথ্যাচারে জড়াচ্ছেন ওমর সানি। এটা ঠিক নয়। আসলে এটা পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্যই বলেছেন। আম্মু আমার সঙ্গে কথাও বলেছেন। উনি চান না পত্রিকায়-টিভিতে এসব নিয়ে আলোচনা বা সংবাদ প্রকাশ হোক।’
বাবা-মায়ের সম্পর্ক এখন কেমন, জানতে চাইলে ফারদিন বলেন, ‘সব ঠিক আছে। আমি আব্বুকে পাচ্ছি, আম্মুকে পাচ্ছি। হ্যাঁ, অনেক বিষয়ে মনোমালিন্য থাকে। আমিও বিয়ে করেছি। আমাদেরও তো হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে আব্বু-আম্মু দু’জন চাচ্ছেন যেন বিষয়টা সমাধান হয়ে যায়।’
জায়েদ খানকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না উলে­খ করে মৌসুমীর ছেলে বলেন, ‘আমরা উনাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাবো এমন নয়। জায়েদ খান আর রাস্তার ব্যাঙ এক কথা। তাই উনাকে নিয়ে ভাবছি না।’
ওমর সানি-জায়েদ দ্ব›দ্ব প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার (১০ জুন)। সেদিন বসুন্ধরার কনভেনশন সেন্টারে ডিপজলের ছেলের বিয়েতে জায়েদকে চড় মেরে বসেন ওমর সানি। তখন ক্ষেপে গিয়ে প্রকাশ্যে পিস্তল বের করে ওমর সানিকে গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেন জায়েদ। অনেকদিন ধরেই নাকি মৌসুমীকে বিরক্ত করছিলেন জায়েদ। ওমর সানি এ নিয়ে ডিপজলের কাছে নালিশও দিয়েছিলেন। ডিপজল সানিকে আশ্বস্ত করেছিলেন জায়েদ আর মৌসুমীকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু শোধরাননি জায়েদ। তাই তার ওপর রেগে ছিলেন ওমর সানি। সুযোগ পেয়ে চড় মেরে বসেন।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জায়েদ খান বললেন, ‘পুরো ঘটনাই মিথ্যা ও বানোয়াট। সানী ভাই একটার পর একটা মিথ্যা নাটক সাজাচ্ছেন। এ বিষয়ে মৌসুমী আপার সঙ্গে কথা বললেই সব জানতে পারবেন।’
ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় দম্পতি ওমর সানী ও মৌসুমী। ১৯৯৬ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সুখে-শান্তিতে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সংসার করে আসছেন। কিন্তু স¤প্রতি শুরু হওয়া এক বিতর্কে ভক্তদের মনে আশঙ্কা, চিড় ধরেছে সানী-মৌসুমীর সম্পর্কে!
যদিও ওমর সানীর অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন জায়েদ খান। এমনকি চড়-পিস্তলের ঘটনাও সত্য নয় বলে তার দাবি।
এরপর সোমবার (১৩ জুন) মৌসুমী নিজেও মুখ খুলেছেন। তিনি স্বামী ওমর সানী নয়, বরং জায়েদ খানের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে নেটিজেনদের মনে তাদের সংসার ভাঙার শঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে। তবুও ভক্তদের প্রত্যাশা, সাময়িক অভিমান-ভুল বোঝাবুঝি ভুলে পুনরায় সুন্দর-শান্তিপূর্ণ সংসারে ফিরবেন এই তারকা দম্পতি।

্রিন্ট

আরও সংবদ