খুলনা | মঙ্গলবার | ০১ জুলাই ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : স্বাধীনতা ও উন্নয়নের রূপকার

মোঃ আশরাফুল ইসলাম |
০১:৩৪ এ.এম | ২৩ জুন ২০২২


বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। অসা¤প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। ওই সময় জাতির জনক বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ দু’টি বাদ দেওয়া হয়। ১৯৭০ সাল থেকে নৌকা দলটির নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের অর্জন মানে বাংলাদেশের অর্জন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ গঠনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬৪-এর দাঙ্গার পর সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের আপোষহীন সংগ্রাম-লড়াই এবং ১৯৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ তথা সশস্ত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিসমূহের একের পর এক ষড়যন্ত্র সত্তে¡ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বারংবার ধ্বংস্তূপ থেকে উঠে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
দেশ ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিসমূহ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল। দীর্ঘ একুশ বছর লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০০১ ও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আরও একটি বিপর্যয় কাটিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এই তিন মেয়াদে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে অগ্রসর করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রথম মেয়াদেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, স্মার্টফোন। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার আধুনিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রয়াসেই বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে পারমাণবিক বিশ্বে, স্থান করে নিয়েছে মহাকাশে। এই সময়ে হাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প, যা বদলে দেবে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও অর্থনৈতিক গতিধারা। শুধু প্রকল্প গ্রহণই নয়, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর ও তদারকি করছেন।
উন্নয়নের মহা-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা করেছে ও ঐ অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সরকারের আরেকটি চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলকে বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের প্রসারেও সারা দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। রাজধানীতে যানজট দূর করতে নির্মাণাধীন মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
আওয়ামী লীগ দেশে বিদ্যুতের বিশাল ঘাটতির বোঝা মাথায় নিয়ে সরকার গঠন করে। এই তিন মেয়াদে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটিয়ে সারা দেশে এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নে পথে। মাতারবাড়ি ও ঢালঘাট ইউনিয়নে ১৪১৪ একর এবং রামপালে প্রায় ১৮৩৪ একর জমিতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং এটির ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হচ্ছে। সমুদ্র পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে দুই টিউববিশিষ্ট বহু লেনের কর্ণফুলী টানেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের এ টানেল সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে।
শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নতুন শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকার নিয়েছে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টণী গড়ে তুলতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।
এই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি দু’বার সাউথ-সাউথ এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরষ্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।
টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরষ্কার দিয়েছে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এন্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ইনস্টিটিউট অব সাউফ এশিয়ান উইমেন।
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম ও উন্নতির নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের অবদান। জাতির জনক দেশকে স্বাধীন করা ও বাঙালি জাতির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য যে দলটি নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে চলেছে। তাই এই দলটির ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমানের সকল ত্যাগী নেতা-কর্মীদের। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
মোঃ আশরাফুল ইসলাম
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ।

্রিন্ট

আরও সংবদ