খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২

অপচয় ও অপব্যয় হতে বেঁচে থাকার উপায়

ড. মুহাম্মদ বেলায়েত হুসাইন |
০২:১০ এ.এম | ২৭ জুন ২০২২


প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ অপচয় ও অপব্যয় হতে বেঁচে থাকা। এজন্য যে সমস্ত বিষয়ে তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে তার মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে, জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে আল­াহওয়ালাদের পন্থা-পদ্ধতি অবলম্বন করা। হাকীমুল উম্মাত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল­াহি আলাইহি অপচয় হতে বাঁচতে তাঁর এক মুরিদকে নসীহত করেছেন, ‘আল­াহওয়ালাদের পন্থা পদ্ধতি অবলম্বন করবে। বিশেষ বেশ-ভূষার লোকদের পন্থা অবলম্বন করবে না। প্রচলিত প্রথা পদ্ধতি ও রীতি-নীতির মোটেও অনুগামী হবে না। (আনফাসে ঈসা) বিশেষ বেশ-ভূষার অর্থ হলো কেউ নিজের জন্য নিয়ম বানিয়ে নিয়েছে যে, আমি সব সময় এ ধরনের টুপি পরব। এ ধরনের জামা পরব। এ ধরনের মোজা পরব। এ ধরনের জুতা পরব। তারপর এ বিশেষ ধরনের পোশাকের প্রতি এতো বেশি গুরুত্বারোপ করেছে যে, ওই পোশাক সে ব্যক্তির পরিচিতি হয়ে গেছে। এটা হলো বিশেষ বেশ-ভূষা। 
প্রচলিত প্রথা-পদ্ধতি ও রীতি-নীতির মোটেও অনুগামী না হওয়া। আমাদের সমাজে নানাবিধ প্রথা-পদ্ধতি ও রীতিনীতি চালু রয়েছে। যার অধিকাংশই শরীআত সম্মত না। যেমন, কোনো দিবস বা বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে, বাড়িঘর অতিরিক্ত সাজসজ্জা, লাইটিং এবং গান বাজনার আয়োজন করা, ছবি তোলা ও ভিডিও করা। শবে-বরাতে বাড়িঘর, মসজিদে ও কবরস্থানে অতিরিক্ত সাজসজ্জা ও লাইটিং করা। জন্মদিন, বিবাহবাষির্কী, সুন্নাতে খাৎনা ও মৃত ব্যক্তিদের ইছালে ছাওয়াবের নামে ভোজের আয়োজন করা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে প্লেটে খাবার নিয়ে সৌজন্যবোধ মনে করে খাবার শেষে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাবার প্লেটে রেখে দেওয়া। শারিরীক সৌন্দর্য বর্ধনের নামে শরীআত সম্মত নয় এরকম পোশাক ক্রয় করা ও প্রয়োজনাতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা। এছাড়াও প্রয়োজন পরিমাণ পোশাক থাকার পরও পিকনিক, জন্মদিন, নববর্ষ, বিবাহবাষির্কী, বিয়ে-শাদি বা কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক ক্রয়করা। অতএব সমাজে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও পালা-পার্বণ প্রচলিত আছে, যার অধিকাংশই শরীআত সম্মত না হওয়ায় এই সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান ও পালা-পার্বণকে কেন্দ্র করে টাকা-পয়সা খরচ পরিহার করতে হবে। 
তীব্র প্রয়োজন ছাড়া ঋণ গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাকা। হাকীমুল উম্মাত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল­াহি আলাইহি আর একটি উপদেশ এই দিয়েছেন যে, তীব্র প্রয়োজন ছাড়া ঋণ করবে না। তাতে যদি সমাজের প্রচলিত প্রথা পুরা করা না যায়, না যাক। ঋণগ্রস্ত হলে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। এর পরিণতি খুবই খারাপ। প্রত্যেক মুসলমানের আল­াহওয়ালাদের অনুসৃত পথেই চলা উচিত। (আনফাসে ইসা) 
ব্যয় করার পূর্বে চিন্তা করা যে, এ ক্ষেত্রে যদি ব্যয় না করি, তা হলে কোনো ক্ষতি হবে কী না? সায়েখুল ইসলাম আল­ামা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন, অপচয় সম্পর্কিত আলোচনায় সর্বপ্রথম হজরত থানভী রহমাতুল­াহি আলাইহির একটি মালফুজ উদ্ধৃত করেছেন। মালফুজটি হজরত থানভী রহমাতুল­াহি আলাইহি তার এক মুরিদের পত্রের উত্তরে তারবিয়াতুস সালিক কিতাবে লিখেছেন। মালফুজটি এই, ব্যয় করার পূর্বে গুরুত্বের সঙ্গে দু’টো কাজ করবে। একটি এই যে, ব্যয় করার পূর্বে চিন্তা করবে যে, এ ক্ষেত্রে যদি ব্যয় না করি, তা হলে কোনো ক্ষতি হবে কি না। যদি ক্ষতি না হয় তা হলে সে ক্ষেত্রে ব্যয় করবে না। আর যদি ক্ষতি হবে বলে মনে হয়, তা হলে কোনো মুরুব্বির সঙ্গে পরামর্শ করবে যে, এ ক্ষেত্রে ব্যয় করাটা অসমীচীন নয় তো? তিনি যা বলবেন সে অনুযায়ী কাজ করবে। ক্ষতি দ্বারা বাস্তবিক ও প্রকৃত ক্ষতি উদ্দেশ্য। যার মাপকাঠি হলো শরীআত। কাল্পনিক ক্ষতি উদ্দেশ্য নয়। (ইসলাম আওর হামারী জিন্দেগী)
এছাড়াও কোনো জিনিস ক্রয় করার পূর্বে চিন্তা করে দেখা যে, এর প্রয়োজন আছে কি না? অপর এক মালফুজে হজরত থানভী রহমাতুল­াহি আলাইহি বলেন, অপচয় সম্পর্কে বলছি যে, যখন কোনো জিনিস ক্রয় করতে চাও, তখন চিন্তা করে দেখ যে, এর প্রয়োজন আছে কি না। যদি অবিলম্বে প্রয়োজনের কথা মনে পড়ে তা হলে তা ক্রয় করো। আর যদি অবিলম্বে প্রয়োজনের কথা মনে না পড়ে, তা হলে ক্রয় করো না। কারণ যে প্রয়োজনকে আধা ঘন্টা ধরে চিন্তা করে করে সৃষ্টি করতে হয়, তা প্রয়োজন নয়। আর যদি অন্তরে খুব চাহিদা হয়, আর উলে­খযোগ্য প্রয়োজনের কথা মনে না পড়ে, তা হলে এমতাবস্থায় জিনিসটি ক্রয় করো এরপর ধীরে সুস্থে চিন্তা করতে থাক। যদি অপচয় না হওয়া নিশ্চিত হও তা হলে খাও। অন্যথায় দান করে দাও। (আনফাসে ইসা, ইসলাম আওর হামারী জিন্দেগী)
সুন্নাতের অনুসারী বিশুদ্ধ জ্ঞান ও বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী কোন ব্যক্তিকে নিজের অনুসরণীয় ব্যক্তি বানিয়ে নেয়া। কৃপণতা, দানশীলতা, অপচয়, অপব্যয় এবং মিতব্যয়ীতা এই বিষয় গুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সূ²াতিসূ² ভাবে জড়িয়ে আছে। আমার কোন কাজে কতটুকু অপচয় হচ্ছে? কোন কাজে কতটুকু অপব্যয় হচ্ছে? বা আসলেই অপচয়-অপব্যয় হচ্ছে কি না? কোনটি কৃপণতা আর কৃপণতার বিপরীতে দান করতে গিয়ে আমি অপচয় করছি কি না? কতটুকুই বা মিতব্যয়ী হতে হবে? আসলে এটি মিতব্যয়ীতা নাকি কৃপণতা? এই সমস্যাগুলি একজন সাধারণ মানুষের জন্য বুঝা বা বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজটি করা অত্যন্ত কঠিন। এজন্য এই সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে একজন আল­াহওয়ালার সাথে সম্পর্ক কায়েম করে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন অবস্থার কথা তাকে জানাতে হবে এবং ব্যবস্থাপত্র নিতে হবে।  
আল­াহই সর্বজ্ঞ। মহান আল­াহ তা’য়ালা আমাদেরকে কৃপণতা, অপচয় ও অপব্যয় হতে হেফাজত করে মিতব্যয়ী ও দানশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। 
লেখক: বায়োকেমিস্ট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খুলনা।

্রিন্ট

আরও সংবদ

ইসলাম

প্রায় ১৪ দিন আগে

ইসলাম

প্রায় ১ মাস আগে