খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা

সাতক্ষীরা জেলার ১৫২৭ একর খাস জমি প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
১১:৩৫ পি.এম | ৩০ জুলাই ২০২২


শহিদ জায়েদার আত্মত্যাগ ও সাতক্ষীরার খাসজমির আন্দোলন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক গতকাল শনিবার বেলা ১১ টায় শহরের খামারবাড়ির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন উত্তরণের আমার প্রকল্পের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটি এ বৈঠকের আয়োজন করে।
কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম।  বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, শিক্ষাবিদ কিশোরী মোহন সরকার, অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জেলা ভূমি কমিটির সভাপতি মোঃ আনিসুর রহিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উত্তরণের প্রকল্প পরিচালক মনিরুজ্জামান জমাদ্দার।
প্রধান অতিথি বলেন, জায়েদার আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে সাতক্ষীরার ভূমিহীনদের আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছিলো। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই এসে ভূমিহীনদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্র“তির কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। ১৫২৭ একর খাস জমি প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে আছে। সেগুলো উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করতে হবে। কোন ভূমি কোন অবস্থায় আছে সেটার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। কোন ভূমিহীন কী সমস্যায় আছে, কীভাবে জমির নামপত্তন করা যায়, যিনি দলিল পাননি তার দলিল হস্তান্তর করা যায়, কোন খাস জমি ভূমিদস্যুরা মিথ্যা মামলা করে তাদের দখলে রাখতে চায় সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। মোঃ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, সেই সময় যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আজও তিনি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এই সমস্যার সমাধান চাওয়া যেতে পারে। ভূমিহীন আন্দোলনের সাথে প্রথমে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের অনেক মারা গেছেন। আজ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের নেতৃত্বে সরকারি প্রক্রিয়ায় বাকী খাসজমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন হবে এটা প্রত্যাশা করি। 
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম মোল­া, জেএসডির সাধারণ সম্পারক সুধাংশু শেখর সরকার, পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন, ভিপি এড. নাজমুন নাহার ঝুমুর, স্বদেশের পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, দেবহাটা উপজেলা ভূমি কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন, দেবহাটা-কালিগঞ্জের ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা ওহাব আলী সরদার, পৌর কাউন্সিলর রাবেয়া পারভীন, পৌর কাউন্সিলর অনিমা রানী মন্ডল, পৌর কাউন্সিলর নূরজাহান নুরী, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান কহিনুর ইসলাম, গণফোরামের সভাপতি আলী নুর খান বাবুল, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সাত্তার, নোড়ারচক ভূমিহীন সমিতির সভাপতি মোশারাফ হোসেন, জেলা ভূমিহীন সমিতির একাংশের সভাপতি কওসার আলী, আশাশুনি উপজেলা ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া ইকবাল, ফরিদা আক্তার বিউটি, এড. জাফর উল­াহ ইব্রাহীম, উদীচির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রভাষক ইদ্রিস আলী, সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৮ সালের আন্দোলনের পূর্বে দেবহাটা-কালিগঞ্জের খাস জমিতে বসবাসকারীদের অধিকাংশই দরিদ্রসীমার নিচের মানুষ। ঐ সময় ভূমিহীন গণনাকালে ঐ এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করত এমন পরিবারের সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৭৬টি। কিন্তু জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর এখন তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবার প্রতি বন্দোবস্তকৃত প্রায় এক একর জমির মধ্যে বাড়ি-ঘর ছাড়া বাকি জমিতে ক্ষেত খামার ও মাছ চাষ করে তারা প্রত্যেকেই এখন স্বাবলম্বী। অনেকের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ভূমিদস্যুরা ঐ জমিতে যে পরিমাণ ফসল ফলাতো ভূমিহীনরা এখন তার কয়েকগুণ বেশি ফসল ফলিয়ে জাতীয় উন্নয়নে অধিকতর ভূমিকা রাখছে। বক্তারা দেবহাটা-কালিগঞ্জের খাসজমিতে বসবাসকারীদের মধ্যে যারা জমি পেয়েছে তাদের জমির নামপত্তন করা এবং যারা এখনো জমি পাননি তাদেরকে অতিদ্রুত জমি দেওয়ার আহŸান জানান। এছাড়া জেলার অন্যান্য এলাকার খাসজমি উদ্ধার করে তা ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহŸান জানান। গোল টেবিল বৈঠক শেষে একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ