খুলনা | বুধবার | ২৮ মে ২০২৫ | ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আশুরা উপলক্ষে যেসব কাজ ও ইবাদত ইসলামে নিষিদ্ধ

ধর্ম ডেস্ক |
০৬:১০ পি.এম | ০৮ অগাস্ট ২০২২

 

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আশুরায় ইবাদত-বন্দেগি মনে করে রুসুম রেওয়াজ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরবি হিজরি সনের মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আশুরা বা মহররমের ১০ তারিখ। পৃথিবীর শুরু থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে।

নানা কারণে পরিচিত ঐতিহাসিক এ আশুরা উপলক্ষ্যে অনেক উৎসব পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু আশুরার রোজা রাখা, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া এবং স্বাভাবিক নফল-ইবাদত বন্দেগির বাইরে অন্য কোনো রুসুম রেওয়াজের ধারা অব্যাহত রাখা বৈধ নয়। এমনকি কিছু কিছু রুসম-রেওয়াজ পালন করা নিষিদ্ধও বটে।

ইসলামে আশুরায় রোজা ও অন্যান্য সময়ের মতো নফল ইবাদত-বন্দেগি ছাড়া বিশেষ কোনো ইবাদত-বন্দেগি কিংবা রুসুম রেওয়াজের দিকনির্দেশনা নেই। আশুরাকে উপলক্ষ্য করে যেসব কাজ ও ইবাদত ইসলামের নির্দেশনা নেই, তাহলো-

> আশুরা উপলক্ষ্যে নিজেদের শরীরকে চাকু, ব্লেড, ছুরি কিংবা লাঠির আঘাতে রক্তাক্তকরণ। এ বছর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাও নিজেদের শরীরকে রক্তাক্ত করার বিষয়টিকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন।

> আশুরা উপলক্ষ্যে রণ-প্রস্তুতির মহড়া প্রদর্শন;

> আশুরা উপলক্ষ্যে সাজ-সজ্জা প্রদর্শন;

> আশুরা উপলক্ষ্যে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা।

> আশুরা উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে হালুয়া-রুটি বিতরণ। তবে অনেকেই গরিব-অসহায়দের খাওয়ানোর দোহাই দিয়ে এটি জায়েজ বা বৈধ করার প্রচেষ্টা চালায়। মূলতঃ তা হয় না বললেই চলে। তবে পারাবারিকভাবে ঘরে ভালো খাবার আয়োজনের ব্যাপারে হাদিসের একটি বর্ণনা রয়েছে।

আশুরার দিনে যথাসাধ্য খাবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভালো খাবার খাওয়া। হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির, বায়হাকি)

তারপরও আশুরা উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষ উল্লেখিত রুসুম রেওয়াজগুলো উদযাপন করে থাকেন। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিকোন থেকে কিংবা কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক এসবের কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।

এছাড়াও - আশুরা উপলক্ষ্যে শোক পালন, তাজিয়া মিছিল, বিশেষ কোনো নির্ধারিত নামাজ ও নির্ধারিত কোনো দোয়া পড়ায় ইসলামের নির্দেশনা নেই।

তবে আশুরা উপলক্ষ্যে রোজা রাখার ব্যাপারে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তাছাড়া রোজা রাখার দিনক্ষণ সম্পর্কেও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। আর তাহলো-

> আশুরার নফল রোজা মহররম মাসের ১০ তারিখ পালন করা সুন্নত। এ দিন রোজা পালনকারীর বিগত বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

> সাহাবায়ে কেরাম যখন বিশ্বনবীকে (সা.) জানালেন যে, ইহুদিরাও এ দিন আশুরা উপলক্ষ্যে রোজা পালন করেন। তখন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তবে আমরা মহররমের ০৯ তারিখও আমরা রোজা রাখব। সে হিসেবে ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।

তবে-

ইহুদিদের অনুসরণ ও অনুকরণ থেকে নিজের বিরত রাখতে অনেকে মহররমের ০৯ তারিখ রোজা রাখতে না পারলে আশুরার পরের দিন অর্থাৎ ১১ মহররম রোজা পালন করে থাকেন। আর তাতে দুইটি রোজা পালন করা হয।

সেক্ষেত্রে-

> ৯ ও ১০ মহররম রোজা রাখলে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পালন হয়ে যায়।

> ৯ তারিখ রোজা রাখতে না পারলে ১০ ও ১১ মহররম রোজা পালনের মাধ্যমে ইয়হুদিদের অনুসরণ থেকে বিরত থাকা যায়। আর এ কারণে অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররা আশুরার পরের দিন রোজা পালন করাকে বৈধ বলে মত দিয়েছেন। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ মহররম রোজা পালন করা।

> তবে কেউ কেউ ৯-১১ মহররম এ তিনদিন রোজা পালনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আশুরায় ইবাদত-বন্দেগি মনে করে রুসুম রেওয়াজ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখার পাশাপাশি হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

্রিন্ট