খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

‘আধুনিকতা শুধু পোশাকেই নয়, মননে এবং জ্ঞানেও’

তানজিলা সুলতানা |
১২:৩৫ এ.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২


কোন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখালেখি খুবই অপছন্দের। তবে বাধ্য হয়েই আজ এ লেখা। শালীনতার সৌন্দর্য বিশেষ করে নারী জীবনের সব চেয়ে বড় সৌন্দর্য। নারী-পুরুষ উভয়কেই শালীনতা বজায় রেখে চলার নির্দেশ আছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে।
আমার জন্ম গ্রামে। সেখানেই বড় হয়েছি। আমি নানীকে দেখিনি, দাদীকে দেখেছি। সব সময় ঘোমটা দিয়ে থাকতেন। আমার মা, খালা, চাচী, ফুফুরাও তেমনি সবসময় ঘোমটা দিয়ে থাকেন। আমার আম্মা যখন গ্রামে থাকতেন বাড়ির সব কাজ নিজ হাতে করতেন। পাড়া প্রতিবেশীরা কখনো আম্মার চেহারা পুরোপুরি দেখতো না। গ্রামে যারা থাকে তারাও ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পরেন না। অনেকের দাদী, নানী বা প্রতিবেশী ব্লাউজ ছাড়া আটপৌরে শাড়ী পড়তেন। কিন্তু তারা কখনো লোক সমাগমে বের হতেন না। তখনকার দিনেও বাল্য বিয়ের প্রচলন ছিলো দাদী, নানীদের। ১০-১৫ জন বাচ্চাও হতো। আমার নানীর ছিলো ১১ সন্তান। আমার কলেজের এক বান্ধবীর ছিলো ১৫ জন ভাই-বোন।
বাংলাদেশের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার কোন শিক্ষার্থী যদি এমন অশালীন পোশাক পরিধান করে প্রকাশ্যে আসে, তাহলে অন্যরা কি করবে। এমন উচ্ছৃঙ্খল পোশাক পরিধান করা কি এ সমাজে সাজে...? যেই আধুনিকতা আমাদের উচ্ছৃঙ্খলতা শেখায় সেই আধুনিকতার কি দরকার আছে আমাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মেয়েটি ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পরে অর্ধেক শরীর বের করে (অর্ধ উলঙ্গ) নারী অধিকারের কথা বলতে এসেছেন জনসম্মূখে। এতে নারীর অধিকারতো দূরের কথা নারীদেরকে আরো অমর্যাদার আসনে বসানো হয়েছে কিনা ভাবতে হবে। মেয়েটির ভুল ম্যাসেজ-এর জন্য আমাদের পরবর্তী জেনারেশন (আগামী প্রজন্ম) উচ্ছৃঙ্খল পথে পা বাড়াতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছি।
আমাদের জানতে হবে কোন পোশাক পরলে শালিন লাগবে আর কোন কাপড় পরলে অশালীন লাগবে। আর এটুকু বোধ যদি না থাকে, তাহলে পাগল আর সুস্থ মানুষের মাঝে পার্থক্য কোথায়? হায় রে....দুনিয়া। আপনি কি ধরনের পোশাক পরে বের হবেন, তা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। বিয়ের পোশাক পড়ে কিন্তু কেউ ঘুরতে যায় না। রাতে ঘুমানোর সময় বা জিমে আমরা যেমন পোশাক পরি, একই পোশাক পড়ে কি আমরা রাস্তায় বের হই?
একজন পতিতাও বাইরে বের হন শালীন পোশাক পড়েই। রাস্তায় শুধু কিছু পাগল হয়ত পোশাক ছাড়া বের হতে দেখা যায়, তবুও সব পাগলই কিন্তু নয়। প্রচন্ড রোদে গরমেও একজন রিকশা বা ভ্যান চালক খালি গায়ে বের হন না।
কে কি ধরনের পোশাক পরবে সেটা তার নিজস্ব বিষয় তবে অবশ্যই তা হতে হবে শালিন। একজন পুরুষ মানুষ যদি উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় বের হয় তার দিকেও সাধারণ জনগণ তাকিয়ে থাকবে। উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ানো একজন উন্মাদের কাজ। শরীর ঢাকার জন্য যে পোশাক তা দিয়ে যদি শরীরটাই না ঢাকে, তা কি করে পোশাকের আওতায় পড়ে.....।
সাঁতার কাটতে নামার সময় আমরা যে পোশাক পরিধান করি, সে পোশাক পড়ে কখনো কোন প্রোগামে নিশ্চয়ই যাব না। কোন অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তিতে দেখতে নিশ্চয়ই বিয়েতে যাওয়ার মত জমকালো পোশাক পড়বো না। বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়া সহ প্রিন্ট মিডিয়াতে বিতর্কিত শিক্ষার্থীকে নিয়ে রীতিমত আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ব্লাউজ পড়েছেন কিন্তু ঢাকেননি শরীর। যে ব্লাউজে তার শরীর ঢাকলো না সেটা পড়ারও কোন দরকার ছিল? কোথায় কি পোশাক পরতে হয় তা সবই কমনসেন্সের ব্যাপার। তা নির্ভর করে তার পরিবারিক মূল্যবোধের উপর। পরিবার থেকে যে যেমন শিক্ষা নিবেন, তেমন শিক্ষাই সে পাবে। কোথায় কি ধরনের পোশাক পরতে হবে, তা পরিবার থেকেই শিক্ষা নেয় শিশুকাল থেকে। 
লেখক : নারী উদ্যোক্তা, শাহজাহানপুর, ঢাকা।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ৫ মাস আগে