খুলনা | শনিবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

আবারও এসএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাঁস জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক

|
১২:১৪ এ.এম | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২


একসময় দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারি দেখা দিয়েছিল। পাবলিক পরীক্ষা থেকে চাকুরি কিংবা ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো অহরহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ভাইরাল হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সরকারের অন্যতম ব্যর্থতাই বলা যায় এ প্রশ্নপত্র ফাঁসকে। এ নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ ছিল না। এক পর্যায়ে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রায় বন্ধও হয়ে যায়। কিন্তু এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনই দিনাজপুর বোর্ডের ছয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র যেভাবে ফাঁস হলো, তাতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
আগের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল সরকারি প্রেস ও শিক্ষা খাতের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে পেশাদার একটি জালিয়াত চক্র। কিন্তু এবার একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব তথা প্রধান শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তিনি ও তাঁর সহযোগী শিক্ষকেরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। রক্ষকই-ভক্ষকের ভূমিকায় নেমেছেন!
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব লুৎফর রহমান, সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ জোবাইর হোসেন ও মোঃ আমিনুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার হন ওই বিদ্যালয়ের আরও দু’জন শিক্ষক এবং একজন অফিস সহকারী। ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে। পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব লুৎফর রহমান থানা থেকে প্রথম দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে আসার সময় আরও ছয়টি প্রশ্নপত্র কৌশলে হাতিয়ে নেন এবং পরে সহযোগী শিক্ষকদের সহায়তায় ওই প্রশ্ন হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করেন। বিনিময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক শিক্ষার্থী তার প্রাইভেট টিউটরকে জানান, যিনি একটি কলেজের শিক্ষক। এরপর ওই শিক্ষক সাংবাদিকদের জানান এবং তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য নতুন করে প্রশ্নপত্র ছাপা ও চারটি পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা পৌনে দুই লাখ। সৃজনশীল অংশের দুই সেট (ধরণ) করে এবং এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) অংশের জন্য এক সেট করে নতুন প্রশ্নপত্র ছাপানো হচ্ছে, যাতে এক কোটি টাকা খরচ হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কেবল বেদনাদায়ক নয়, গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে, যাঁরা ধরা পড়েছেন, কেবল তাঁরাই কাজটি করেছেন, না নেপথ্যে আরও কেউ আছেন? প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডকে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। আর নৈতিকতার দিক থেকে যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিতে চেয়েছেন, তাঁরাও দায় এড়াতে পারেন না। এসব অভিভাবক জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের বিপথগামী করেছেন বা করতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে আমরা ওই কলেজ শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছেন।
যে শিক্ষকদের হাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ন্যস্ত, সেই শিক্ষকেরা এমন কাজ করবেন, ভাবতেও অবাক লাগে। তাঁরা কেবল নিজেরা অপরাধ করেননি, সেই অপরাধের শরিক করেছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরও। এমন হতে থাকলে সমাজে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ বলে কিছু থাকবে না?
 

প্রিন্ট

আরও সংবাদ