খুলনা | শনিবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

কোভিডে বেড়েছে বাল্যবিবাহ রোধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি

|
১২:২১ এ.এম | ০৩ অক্টোবর ২০২২


বাংলাদেশে কোভিড মহামারির অন্যতম বড় অভিঘাতটি লেগেছে মেয়েদের ওপর। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একনাগাড়ে ৫৪৪ দিন বন্ধ ছিল। পড়াশোনার এই দীর্ঘ ছেদে নানা কারণে স্কুলপড়–য়া মেয়েদের বিয়ে দিতে অনেক অভিভাবকই উৎসাহিত হয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর তাদের বেশিরভাগকে আর বিদ্যালয়ে ফেরানো যায়নি। নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নিশ্চিতভাবেই এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সা¤প্রতিক জরিপে কোভিড মহামারির দুই বছরে বাল্যবিবাহের আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ের হার ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ১০ শতাংশ বেড়েছে।
কোভিড মহামারির দুই বছর এই বয়সী প্রায় ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বছর বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশের, দ্বিতীয় বছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। আর বিবাহিত মেয়েদের মাত্র ২৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে ফিরেছে। বিবাহিত মেয়েদের ১৫ শতাংশ অন্তঃসত্ত¡া। দেশের ২০ জেলায় ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক স্তরের ২ হাজার ৮২০ জন মেয়ের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগ মনে করেন, কোভিডকালে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বুলিংসহ নানা ধরণের সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বোধ করেছেন। জরিপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাল্যবিবাহের হারের মধ্যে এক জেলার সঙ্গে আরেক জেলায় ব্যাপক তারতম্য রয়েছে। রাঙামাটিতে বাল্যবিবাহ যেখানে ৪ শতাংশ, চাঁদপুরে সেখানে ৪০ শতাংশ। এছাড়া কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, মাসে ২৮৮ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার। ইউএনএফপিএর এ জরিপের চিত্র ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূলের যে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার, তাতে বড় ধরণের ধাক্কা। বাল্যবিবাহে মহামারি ও বিধি নিষেধের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও জরিপ ও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। স¤প্রতি ‘চর ও হাওড়াঞ্চলে বাল্যবিবাহ রোধে বন্ধে নেওয়া জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সরকারের ২৪টি মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফে বাংলাদেশের জেন্ডার ফোকাল পয়েন্ট তাহমিনা হক মনে করেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
নারীর অগ্রযাত্রায় প্রধান যেসব প্রতিবন্ধকতা, তার মধ্যে বাল্যবিবাহ একটি। সমাজের অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত অংশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা এমনিতেই বেশি। কোভিড মহামারি সেটি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাল্যবিবাহকে জরুরি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সেটি রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ