খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আপনি কি পরিস্থিতিগত বিষণœতার স্বীকার?

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, মনোবৈজ্ঞানিক কাউন্সিলর |
০১:০২ এ.এম | ০৬ অক্টোবর ২০২২


কেস স্ট্যাডি:- ১, কল্পনা দেবী, বয়স-৩৫ বছর। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে তার সংসার ভালোই চলছিল। সম্প্রতি তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্বামীকে হারিয়ে কল্পনা দেবী এখন বড় দিশেহারা কারণ স্বামীকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। স্বামীকে হারিয়ে তার এখন কিছুই ভালো লাগে না। তিনি বর্তমানে গুটি কয়েক ব্যক্তি ব্যতীত অন্যদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি এখন কোন কাজে আর আগের মত আনন্দ পায় না।
কেস স্ট্যাডি:- ২, মহিদুল সরদার, বয়স-৪০ বছর। তিনি একটা বেসরকারি ভালো মানের কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকুরি করতেন। চাকুরিগত মর্যাদা ও উচ্চ বেতন নিয়ে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছিলেন। দেশে হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিতভাবে করোনার উপস্থিতি দেখা দেবার কারণে আর্থিক সংকটের অজুহাতে কোম্পানি তাকে চাকুরি হতে অব্যাহতি দিয়েছে। হঠাৎ চাকুরি হারিয়ে এখন তিনি দিশেহারা। এখন তার মন সারাক্ষণ ভারাক্রান্ত থাকে, মাঝে তিনি একবার আত্মহত্যা করতে উদ্ধত হন। কিন্তু পারিবারিক নিবিড় তদারকির কারণে এ যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
উপরের ঘটনা দু’টি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনের জন্য অনাবশ্যক ও অপ্রত্যাশিত কোন বড় রকমের ঘটনা, মানুষের জীবনে আর্বিভাব হলে তাহা জীবনকে বিষণœময় করে তুলতে পারে। আর উপরের ব্যক্তিভিত্তিক লক্ষণসমূহ এক প্রকার বিষণœতাকে নির্দেশ করছে যাকে সাধারণত বলা হয় পরিস্থিতিগত বিষণœতা।
* পরিস্থিতিগত বিষণœতার লক্ষণ: পরিস্থিতিগত বিষণœতা হলো ক্ষণস্থায়ী ও মানসিক চাপ সংক্রান্ত বিষণœতা যার আগমন ঘটে, জীবনে ঘটে যাওয়া কোন আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যাবার পর। পরিস্থিতিগত বিষণœতার লক্ষণ সমূহ হলো- ব্যক্তির
* গভীর দুঃখবোধ অথবা আশাহীনতা,
* প্রাত্যহিক সাধারণ কাজকর্মে আনন্দহীনতা বোধ করা,
* মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করা,
* ঘুম কমে যাওয়া, খাবারে অনীহা দেখা দেওয়া,
* কোন বিষয়ে মনোযোগ নিবন্ধনে সমস্যা দেখা দেওয়া,
* প্রাত্যহিক সাধারণ কাজকর্মে অনীহা দেখা দেওয়া,
* সামাজিক পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করা,
* সামাজিক পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করা, 
* প্রাত্যহিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গুরুত্ব না দেওয়া,
* আত্মহত্যা চিন্তা বা এমন কি আত্মহত্যা চেষ্টা করা।
পরিস্থিতিগত বিষণœতার কারণ সমূহ:
* ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যকার সম্পর্কজনিত সমস্যা বা বৈবাহিক সমস্যা যেমন- বিবাহ বিচ্ছেদ,
* প্রিয়জনের বিয়োগ বা মৃত্যু,
* সামাজিক সমস্যা অথবা চাকুরির স্থানের সমস্যা বা বাচ্চাদের স্কুলের কোন সমস্যা,
* নেতিবাচক অর্থনৈতিক অবস্থাজনিত কারণে যেমন- অর্থনৈতিক দীনতা, চাকুরি হারানো
* চলমান পরিস্থিতির পরিবর্তন- চাকুরি হতে অবসর, গর্ভধারণ বা নবজাতকের জন্মলাভ
* জীবন-মৃত্যু অভিজ্ঞতা -শারীরিক আঘাত, যুদ্ধ অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি মোকাবেলা করা
* বিভিন্ন প্রকার মানসিক সমস্যা
* বিপদজনকস্থানে বসবাস করা ইত্যাদি কারণে পরিস্থতিগত বিষণœতা ব্যক্তির ভিতর আর্বিভাব হতে পারে।
জৈবিক কারণ: 
* ব্রেনের গঠনগত সমস্যা 
* ব্যক্তির নিউরোট্রানেন্স মিটারের সমস্যা, 
* হরমোনগত সমস্যা
* বংশগত কারণে
পরিস্থিতিগত বিষণœতা থেকে মুক্তির উপায়: (১) প্রাতঃকার্য সমূহ বৃদ্ধি করা: যেমন- প্রাতঃভ্রমণ করা, গৃহস্থ কার্যসমূহ বৃদ্ধি করা, প্রয়োজনে সাইকেলিং করা, প্রকৃতির নিকটস্থ হওয়া। (২) স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের অভ্যাস প্রতিষ্ঠিত করা- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম হতে উঠা। কমপক্ষে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমানো। (৩) স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের অভ্যাস গঠন: খাবারে প্রক্রিয়াজাত চিনি, সোডা জাতীয় খাবার হ্রাস করা, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- চা, কফি হ্রাস করা। এ্যালকোহল বা ধূমপান বর্জন করা। (৪) সামাজিক মেলামেশা বৃদ্ধি করা: সাপোর্টিভ গ্র“প তৈরি করা। প্রিয় ও বিশ্বস্ত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মেলামেশা বৃদ্ধি করা, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা।
পরিস্থিতিগত বিষণœতা জীবনের জন্য কখনো কখনো বড় রকমের সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে যা জীবনের অস্তিত্বের হুমকি স্বরূপ হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে একজন দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করে আপনিও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হতে পারেন। 
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা। 

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ৫ মাস আগে