খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

করোনা পরবর্তী প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি : নিরাময়ে আমাদের করণীয়

এলিজা পারভীন |
০২:২৯ এ.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২২


২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারী শুরু হয়। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ রাখতে হয় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে  দূরে ছিল। এই দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতায় বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যেমন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, শিখন ঘাটতির ক্ষেত্রে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থী যারা দূরশিক্ষণে সমানভাবে অংশ নিতে পারেনি তাদের সাথে শহরে বাস করা শিক্ষার্থীদের ব্যবধান বেড়ে যাওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া, মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পাওয়া, দারিদ্র ও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন কারণে ছেলে শিক্ষার্থীদের শ্রমমূলক কাজে জড়িত হওয়া, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া, পাঠাভ্যাস নষ্ট হওয়া এবং মানসিক বিকাশগত সমস্যা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। এতসব সমস্যার মধ্যে শিখন ঘাটতি বিষয়ে কিছু কথা বলবো ।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা : ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস হতে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিদ্যালয়ে সরাসরি শ্রেণি পাঠদান শুরু হয়। সে সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কিছুটা উন্নতি হলেও অবস্থা সন্তোষজনক নয়। সরাসরি পাঠদান করতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি শ্রেণিতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি রিডিং পড়তে পারেনা। গণিতেও বেশ দুর্বল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার মধ্যে শুদ্ধ, স্পষ্ট উচ্চারণে সাবলীলভাবে বাংলা ও ইংরেজি পড়তে পারা ও গণিতের চার নিয়ম জানা অন্যতম। অথচ অনেক শিক্ষার্থী বাংলা বর্ণমালা চেনে না, যুক্তবর্ণ পড়তে পারেনা। ইংরেজিতে বর্ণমালা না চেনার পাশাপাশি শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। করোনা মহামারীর সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পড়ালেখার সাথে তাদের সম্পৃক্ত রাখার যে আন্তরিক প্রয়াস ছিল তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে করে অন্ততঃ ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়া বা লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার মতো মারাত্মক কোন ধস নামেনি। পরবর্তীতে অনলাইন শ্রেণি পাঠদানও কিছু শিক্ষার্থীকে পড়শোনায় এগিয়ে নেয়। এরপর সরসরি  পাঠদান শুরু হয় ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল থেকে। প্রায় ১ বছর শিক্ষকদের আন্তরিকতা, অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কিছুটা উন্নতি হলেও সন্তোষজনক অবস্থায় আমরা আজও পেঁৗঁছাতে পারিনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী?
করণীয়: ১) শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা। অভিভাবকদের নিজেদের এটা নিশ্চিত করা ও নিজের ছেলে মেয়েকে বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। ২) প্রত্যেক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিবেচনা করে ১টা নিজস্ব পরিকল্পনা করা। ৩) শিক্ষার্থীদের পারগতার স্তর অনুযায়ী দলে ভাগ করে পাঠদান করা ৪) যে শিক্ষার্থী যে অবস্থায় আছে তাকে সেখান থেকে শেখানো অর্থাৎ যে বর্ণ চিনে না তাকে বর্ণ চিনানো ; যে যুক্তবর্ণ পড়তে পারে না তাকে যুক্তবর্ণ শেখানো। ৫) বাংলা ও ইংরেজি পড়তে পারে না বা ভুল করে এমন বর্ণ ও শব্দকার্ড একাধিক পরিমাণে তৈরি করা যাতে দলীয় ভাবে শেখানো যায়। ৬) ধারাবাহিক মূল্যায়ন করে শিশুর প্রতিদিনের রেকর্ড রাখা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৭ ) নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষার্থীর লিখিত ও মৌখিক মূল্যায়ন করা তবে এটা হতে হবে শিক্ষার্থীর পারগতার স্তর অনুযায়ী; সবার জন্য একই প্রশ্নপত্রে অবশ্যই নয়। ৮) বছরের শুরুতে  ১ মাস শিক্ষার্থীর রিডিং দুর্বলতা বা প্রাথমিক যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো নিরাময় করে মূল বইয়ের পাঠ শুরু করা ৯) প্রতিদিন ধাপে ধাপে পরিকল্পনামাফিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে অগ্রসর হওয়া।
করোনার যে প্রভাব আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়েছে সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। শিক্ষাক্ষেত্রে এর যে প্রভাব পড়েছে সেটাও আমরা কাটিয়ে উঠবো। আমরা কোনভাবেই আশাহত নই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক কিছুই করতে পারে তার নজির আমরা বিগত দিনে রেখেছি। আমরা যদি আমাদের আন্তরিকতা, সকল চেষ্টা দিয়ে এগিয়ে যাই তাহলে নিশ্চয়ই সফলকাম হবো। তবে অবশ্যই অভিভাবকদের সহযোগিতা, কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমাদের ধৈর্য্যধারণ করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জয় আমাদের  সুনিশ্চিত। 
লেখক : প্রধান শিক্ষক, আদর্শ (মডেল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা সদর, খুলনা।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ৫ মাস আগে