খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনায় চলতি বছর প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু

স্থান সংকট খুমেক হাসপাতালে, আলাদা ওয়ার্ড নেই ডেঙ্গু রোগীদের

বশির হোসেন |
০১:১৯ এ.এম | ১৭ অক্টোবর ২০২২


আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৩৫ রোগী মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেডে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে। জায়গা সংকটে পূর্বের ডেঙ্গু ওয়ার্ড এখন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই অবস্থার মধ্যে গতকাল রবিবার খুলনায় চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়েছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রবিবার খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুলিয়া বেগম (৫৫) নামে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হয়। খুলনায় এ বছর এই প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হলো। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সদরের দুলিয়া বেগম গত ১৪ অক্টোবর ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ওই এলাকার মো: আলমের স্ত্রী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল চলতি মৌসুমে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৬৪ জন ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে ১২৮ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। বর্তমানে ৩৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ৩৫ জনের মধ্যে ৫ জন খুলনার বাসিন্দা এবং বাকি ৩০ জনের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়।
মেডিসিন ১ ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ অনল রায় সময়ের খবরকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর যে কয়দিন জ্বর থাকে (সাধারণত ৪ থেকে ৫ দিন)  সেই কয়দিন দিনের বেলায় মশারী টাঙ্গীয়ে রাখতে হয়। আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে যে ডেঙ্গু রোগী আছে, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক মশারী টানিয়ে রাখা নিশ্চিত করছি। তবে যে ক’দিন জ্বর থাকে সে ক’দিন দিনের বেলায় কোন এডিস মশা ঐ রোগীকে কামড়ানোর পর আবার সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তার (সুস্থ মানুষ) ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি, আর তাদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে মশারীর বাইরে বের না হতে। আমরা আমাদের জনবল দিয়ে বিষয়টি দেখে রাখার চেষ্টা করছি। 
এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ একটি চিকিৎসা হলো রোগীর শরীরে রক্তের প্লাটিলেট সরবরাহ করা। কিন্তু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে কোন সেল সেপারেটর মেশিন না থাকায় এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ রক্তই রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া হচ্ছে। 
ব্লাড ব্যাংক-এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ জিল্লুর রহমান তরুণ বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ অনস্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘন্টা এটা খোলা থাকে। এখান থেকে রক্তের অত্যন্ত মূল্যবান ফ্যাক্টরগুলো বিনামূল্যে দেয়া হয়। এছাড়া ব্লাড সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সরকার নির্ধারিত অত্যন্ত কমমূল্যে এখানে করা হয়। তবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা প্লাটিলেট দিতে গেলে সেল সেপারেটর মেশিন বা আরও উন্নত অনেক মেশিন বের হয়েছে, যা আমাদের নেই। এখানে মেশিন দেয়া হলে আমরা ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি আরও অনেক রোগের রোগীদের বিশেষায়িত সেবা দিতে পারবো। 
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান সময়ের খবরকে বলেন, হাসপাতালে এমনি সার্বক্ষণিক ধারণ ক্ষমতার তিনগুনের বেশি রোগী থাকে। হাসপাতালের বারান্দা করিডোরসহ কোথায় এমন একটি জায়গা নেই, যেখানে রোগী নেই। এই অবস্থার মধ্যে নতুন আইসিইউ ভবনে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমরা ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা ওয়ার্ড খুলে সেবা দিলেও করোনার প্রকোপ শুরু হলে সেখানে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল খুলি এবং সেখানে এখ পর্যন্ত করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। করোনা অত্যন্ত ছোয়াছে রোগ হওয়ার কারণে একই স্থানে করোনা ও ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সিনিয়র চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে মেডিসিন ওয়ার্ড গুলোর ভিতরে কয়েকটি বেড আলাদা করে সেখানে সব ধরনের চিকিৎসা প্রটোকল মেনে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার কারণে এ বছর ডেঙ্গুতে খুলনায় এ পর্যন্ত একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ