খুলনা | মঙ্গলবার | ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩ কার্তিক ১৪৩২

চালু হচ্ছে ৪৬০ বেডে ক্যান্সার হাসপাতাল ও ১০০ বেডের বার্ন প্লাস্টিক ইউনিট

খুমেক হাসপাতালে শয্যা সংকট, ফ্লোরই এখন ভরসা!

মোহাম্মদ মিলন |
০১:০৩ এ.এম | ০৯ নভেম্বর ২০২২


খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। জরুরি বিভাগের সামনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই দেখা মেলে বারান্দার ফ্লোরের দু’পাশে অসংখ্য মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, তারা আড্ডা বা খোশ গল্পে মজে আছেন। কিন্তু কাছে যেতেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সেখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ পাটি ও কাঁথা বালিশ বিছিয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। শুধু দ্বিতীয় তলায়ই নয়, গোটা হাসপাতালের বারান্দা, জানালার পাশে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা এভাবেই অবস্থান নিয়ে সেবাগ্রহণ করছেন।
কেন তারা এভাবে সেবা নিচ্ছেন? জানতে চাইলে রোগীর স্বজনরা বলেন, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে শয্যা নেই। ফলে বাধ্য হয়েই মেঝেতে অবস্থান নিতে হচ্ছে। আর চিকিৎসকরা বলছেন হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে অবকাঠামো আর শয্যা সংকটে বাধ্য হয়েই রোগীদের ফ্লোরেই চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসকরা যেমন বিপাকে পড়েছে, তেমনই কষ্ট ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা রোগীর স্বজন মনোরঞ্জন রায় বলেন, আমি রোগী নিয়ে এসেছি। ভর্তি করার পর বেডের আবেদন করেছিলাম, কিন্তু বেড পায়নি। অনেক রোগী আছে, কোন বেড খালি নেই। অনেক রোগী বারান্দায় খোলা স্থানে রয়েছে। বেডের ব্যবস্থা হলে সবচেয়ে ভালো হতো।
ফকিরহাট থেকে আসা খলিল সরদার বলেন, রোগী নিয়ে এসেছি, বেড পায়নি। বারান্দায় রয়েছি। বেড পেলে আমাদের সুবিধা হতো। খুব কষ্টে আছি। অন্তত দুইজন মানুষ থাকতে হয়। বারান্দার আগা-মাথা দুইপাশে মানুষ আর মধ্যদিয়ে হাঁটা-চলা করছে। এভাবে কষ্টে কোন রকম দিন কাটছে। ঘুমাতে পারছি না, আমরা রোগী হয়ে যাচ্ছি। ভালো মানুষও রোগী হয়ে যাচ্ছে। কি করে থাকবো? চলেও যেতে পারছি না। ডাক্তাররা সেবা দিচ্ছে, কিন্তু তাতে কি? ভালো মানুষও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের চিকিৎসক সিহাব হোসেন বলেন, রোগীদের বেডের অবশ্যই দরকার। এখানে বিভিন্ন রোগী থাকে। স্টোক ও জ্বরের রোগী থাকে। নিচে তো এসব রোগীর ওইভাবে পয়ঃপরিষ্কারভাবে থাকা সম্ভব নয়। তারপরেও সমস্যা আরও আছে। এখানে বেশিরভাগ মানুষইতো স্বল্প আয়ের মানুষ আসে। ভর্তি হওয়ার রোগীদের বেডের জন্যই খাবার বরাদ্দ থাকে। এছাড়া পাশের রোগী দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে বমি করে দিয়েছে। এতো রোগীর জন্য তো পর্যাপ্ত আয়া-বুয়াও নেই। তারা পরিষ্কার করলেও রোগীকে ১০/১৫ জন দেখতে আসে। তারাও তো অপরিষ্কার করছে। এভাবে আসলে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বেড বাড়ানো প্রয়োজন। বেড বাড়লে অবশ্যই রোগীদের জন্য সুবিধা হয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি মাল্টিপারপাস ও মাল্টিসেক্টোরাল হাসপাতাল। আশেপাশের ১৩টি জেলার রোগী এখানে আসে। যার কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও ১৫০০ উর্ধ্বে রোগী থাকছে। অর্থাৎ ৩০০ শতাংশের বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছি। আমাদের সকল রোগীকে বেডে সংকুলান করতে পারি না, যার কারণে কিছু রোগী সব সময় ফ্লোরে থাকছে। ২০০ শতাংশের মতো রোগী বেশ কয়েক বছর ধরেই বিছানার অভাবে ফ্লোরে রাখছি। কিন্তু আমরা কাউকেই চিকিৎসা বঞ্চিত করছি না।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান বলেন, এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাসপাতাল। এখানে খুলনা ছাড়াও পিরোজপুর, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জের রোগী আসে। কোন রোগীকেই কিন্তু ফেলে দেওয়ার নয়। আমাদেরকে সব রোগীকেই ভর্তি করতে হয়। সবারই সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। জনবল কম ও অবকাঠামো সমস্যা। রোগীরা বারান্দায়, মেঝেতে শুয়ে আছে। এটাতো আমাদের কাছেও ভালো লাগে না। সে জন্য আমরাও খুব কষ্টের মধ্যেই আছি। ডাক্তাররা চেষ্টা করছে, স্টাফরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে যাতে আমরা সবসময় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যেতে পারি।ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান আরও বলেন, হাসপাতালটি ৫০০ বেডের কিন্তু সব সময় ১৫০০ এর কাছাকাছি রোগী থাকে। এতো বিপুল রোগী আমাদের রাখার জায়গাও নেই। সে জন্য আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এর আনুসাঙ্গিক যা যা আছে সেই সব বাড়াতে হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এখানে আরও ১০৬০ বেড বাড়ানোর নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ১৫০০ এর বেশি শয্যা আমাদের হবে। আমাদের ৪৬০ বেডের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে। আবার ১০০ বেডের একটি বার্ন প্লাস্টিক ইউনিট চালু হচ্ছে। তখন আরও আমরা সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো। একই সঙ্গে সেবার মান আরও ভালো হবে। সেবা বেশি রোগীদের আমরা সেবা দিতে পারবো। 

্রিন্ট

আরও সংবদ