খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২

দাওয়াতের কারণেই মুসলমান সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:৫৫ এ.এম | ১৮ নভেম্বর ২০২২


আমরা জানি পৃথিবীতে অসংখ্য জাতি পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু মুসলমান হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। মুসলমান জাতি সবার শেষে এসেছে, কিন্তু সবার আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর একমাত্র কারণ হলো দাওয়াতের কাজ বা মানুষকে আল­াহর দিকে ডাকা। এ ব্যাপারটিই মহান আল­াহ তায়ালা এভাবে পরিষ্কার করেছেনঃ তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য; তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে এবং আল­াহ’র প্রতি ঈমান আনবে (সূরা আল ইমরান: ১১০)। দাওয়াতের কাজ সকল নবী, রাসূলের ওপরই ফরজ ছিল। দাওয়াতের কাজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যার ওপর পুরো দিনের স্থায়িত্ব ও মজবুতি নির্ভর করে। দাওয়াতের মাধ্যমে অবিশ্বাসী কাফেরের ঘর থেকে সাচ্চা-খাঁটি মুসলমান তৈরি হয়, মানুষ আল­াহমুখী হয় এবং সমাজ থেকে কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন দূর হয়। দাওয়াতের মাধ্যমেই মাত্র ২৩ বছরে সমগ্র আরব বিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছিল সমস্ত কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন। দাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সঃ) একটি সুন্দর উদাহরণ দিয়েছেন। এক হাদিসে এসেছেঃ যে ব্যক্তি আল­াহ’র সীমারেখার ভিতরে রয়েছে আর যে ব্যক্তি আল­াহ’র সীমারেখা লঙ্ঘন করে তাদের দৃষ্টান্ত ওই লোকদের মতো যারা এক জাহাজের যাত্রী এবং লটারীর মাধ্যমে জাহাজের শ্রেণি নির্ধারিত হয়েছে। এতে কিছু লোক জাহাজের ওপরের তলায় এবং কিছু লোক নিচতলায় অবস্থান করছে। নিচ তলার লোকদের পানির প্রয়োজন হলে ওপরের তলায় যেয়ে পানি আনতে হয়। এতে যদি তারা মনে করে যে, আমাদের বারবার ওপরের তলায় যাবার কারণে তাদের কষ্ট হয়; সুতরাং আমরা আমাদের অংশে অর্থাৎ জাহাজের নিচ তলায় একটা ছিদ্র করে নিই, এতে পানি পাওয়া যাবে; আর ওপর ওয়ালাদেরও বারবার কষ্ট দিতে হবে না। এমতাবস্থায় যদি ওপরতলার লোকেরা নিচ তলার আহমকদিগকে এই কাজে বাঁধা না দেয়, আর মনে করে তাদের কাজ তারা করুক আমাদের কি আসে যায়, তাহলে জাহাজ ডুবে যাবে এবং উভয় দলই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি ওপরতলার লোকেরা নিচ তলার লোকদিগকে এই কাজে বাঁধা না দেয়, তাহলে উভয় দলই ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে (বুখারি, তিরমিজী)। এই হাদিসে আল­াহ’র রাসূল (সঃ) কতো সুন্দর উপমা পেশ করেছেন!  আমাদের মধ্যেও অনেক লোক আছে যারা আল­াহ’র হুকুম সঠিকভাবে পালন করে; আবার এমন লোকও আছে যারা আল­াহকে ভুলে গেছে, আল­াহ’র হুকুম ঠিক মতো পালন করে না। সুতরাং, যারা আল­াহ’র হুকুম ঠিকমতো পালন করে তাদের উচিত ওই সমস্ত লোকদেরকে বুঝানো যারা আল­াহ’র হুকুম ঠিক মতো পালন করতে পারে না। আমরা যদি এটা না করি; তাহলে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। একবার হযরত আয়েশা (রাঃ) মহানবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলো, দুনিয়াবাসির ওপর যদি আল­াহ’র আজাব আসে আর সেখানে কিছু দ্বীনদারলোকও থাকে তবে তাদেরও কি কোন ক্ষতি হবে? হুজুর (সঃ) এরশাদ করলেনঃ দুনিয়াতে তো সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কিন্তু আখিরাতে তারা গোনাহগারদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। যারা দাওয়াতের কাজ করে তাদেরকে মহান আল­াহ তায়ালা খুবই ভালোবাসেন। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে  আল­াহপাক বলেনঃ ওই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল­াহ’র দিকে দাওয়াত দেয়, নিজে নেক আমল করে এবং বলে যে, আমি মুসলমানের মধ্যে একজন (সূরা হা-মিম সেজদাহ: ৩৩)। মুসলমানদের মধ্যে একটি বিশেষ জামাত থাকা দরকার যারা একনিষ্ঠভাবে দ্বীনের দাওয়াত দিবে ও এর প্রচার বা তাবলীগ করবে। এ ব্যাপারে আল­াহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন একটি জামাত হওয়া জরুরি যারা মঙ্গলের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে; সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে; এবং তারাই পূর্ণ কামিয়াব হবে (সূরা আল ইমরান: ১০৪)। হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষে এসেছে যে, দাওয়াতের কাজ ছেড়ে দিলে দোয়া কবুল হয় না এবং মহান আল­াহ’র সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হতে হয় (ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান)। তাই আমাদের উচিত সাধ্যমতো চেষ্টা করা যাতে মানুষ খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে ভালো কাজ করে। এ বিষয়ের দিকেই ইশারা করে নবী করীম (সঃ) এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্যায় কাজ হতে দেখে সে যেন শক্তি থাকলে হাতের দ্বারা তা বন্ধ করে দেয়। যদি এই পরিমাণ শক্তি না থাকে তাহলে মুখের দ্বারা তা বন্ধ করে দেয়। যদি এই ক্ষমতাও না থাকে তাহলে অন্তর দ্বারা এটাকে খারাপ মনে করে। আর এটা হলো ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর (মুসলিম, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)। আমরা শেষ উম্মত হলেও শ্রেষ্ঠ উম্মত। এর একমাত্র কারণ দাওয়াতের কাজ করা। 
(লেখক : মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সিডনী থেকে)

্রিন্ট

আরও সংবদ

ইসলাম

প্রায় ১৪ দিন আগে

ইসলাম

প্রায় ১ মাস আগে