খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

খুমেক হাসপাতালের চক্ষু বহির্বিভাগের হালচাল

মেশিন তালাবদ্ধ, টর্চলাইটের আলোতে সনাতনী কায়দায় চলছে চক্ষু চিকিৎসা!

বশির হোসেন |
০১:০২ এ.এম | ১৯ নভেম্বর ২০২২


রূপসা উপজেলার কাজদিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওহাব বলেন, অনেক দূর থেকে চোখ দেখাতে এসেছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে। চিকিৎসা নিয়ে বের হওয়ার পর তার সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি আক্ষেপ করে বললেন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কেটেছিলাম টিকিট। তারপর ৪০জনের সারিবদ্ধ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর পর ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করলাম। কিন্তু দূর থেকে চোখে টর্চলাইট মেরে ওষুধ লিখে ছেড়ে দিলো। বাসার পাশে একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল থাকলেও সেখানে না যেয়ে বড় হাসপাতালে আসলাম উন্নত সেবা নিতে, কিন্তু এক মিনিটের মধ্যে আমাকে চিকিৎসা দেয়া হয়ে গেলো, কোন কিছু না দেখে। আমি দীর্ঘদিন চশমা ব্যবহার করি এখন পাওয়ার বাড়ছে না কমছে বা কি হয়েছে কিছুই বুঝলাম না, এখন মনে হচ্ছে এখানে এসে শুধু শুধু পরিশ্রম আর টাকা নষ্ট হয়েছে।
অসন্তুষ্টি ছিলো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চক্ষু চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেন ডুমুরিয়ার আসমা বেগম, ফুলতলার জসিম উদ্দিনসহ অনেকে। 
সরেজমিন দেখা যায় খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চক্ষু পরীক্ষা করার আধুনিক মেশিন সরঞ্জাম আবাসিক সার্জন (আরএস)-এর কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অথচ টর্চলাইট মেরে সনাতনী কায়দায় চক্ষু চিকিৎসা করছেন বর্হিবিভাগের মেডিকেল অফিসার। ফলে বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে সাধারণ মানুষ উপযুক্ত চক্ষু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 
সংশ্লি¬ষ্টরা বলছেন চরম সমন্বয়হীনতার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। অচিরেই সঠিকভাবে চক্ষু চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করেন তারা।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন ১শ’ থেকে ১১০ জনের মত রোগী আসে চক্ষু চিকিৎসা নিতে। এই রোগীদের জন্য একজন মাত্র মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ডাঃ শামিম হাসান। তার রুমে চক্ষু পরীক্ষা করার কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় টর্চলাইট মেরে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। তবে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক সার্জন (চক্ষু) পদটি দখল করেও রেখেছেন একজন গাইনী চিকিৎসক। গাইনী চিকিৎসক হয়েও চক্ষু আবাসিক সার্জন পদটি দখল করে রাখার কারণে এখানে নতুন কেউ আসতে পারছেন না। এ অবস্থার মধ্যে আবাসিক চিকিৎসকের রুমে অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান চক্ষু পরীক্ষা করার মেশিন সরঞ্জাম। অন্যদিকে মেডিকেল অফিসারের রুমে টর্চলাইট মেরে দেখা হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
খুমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ শিমুল চক্রবর্তী জানান, বহির্বিভাগে প্রতিদিন একশ’র মত রোগী হয়। একজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে সকলকে চোখ পরীক্ষা করে সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। রবি ও মঙ্গলবার ইনডোরে অপারেশন থাকে। এই দুই দিন বাদে বাকি চারদিন ৮ থেকে ১০টি রোগী বহির্বিভাগ থেকে ইনডোরে মেশিনে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। যদিও এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আগে যখন আবাসিক সার্জন (আরএস) সত্যজিৎ মন্ডল স্যার ছিলেন বহির্বিভাগে তখন এ রকম সমস্যা ছিলো না, তিনি ৩০/৪০টা রোগী দেখলে কাভার দেয়া সম্ভব ছিলো। এখন এখানে আর এস পদে নতুন কেউ আসলে এই সমস্যা অনেকাংশে সমাধান সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই চিকিৎসক। 
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ রবিউল হাসান সময়ের খবরকে বলেন, বহির্বিভাগে অনেক রোগী আসেন। তাদের মধ্যে যাদের চোখ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়, তাদেরকেই ইনডোরে পাঠানো হয়। তবে আবাসিক সার্জন (আরএস) না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলোচনা করে খুব শিগগিরই এর সমাধান করা হবে বলে জানান হাসপাতালের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

্রিন্ট

আরও সংবদ