খুলনা | সোমবার | ০৭ জুলাই ২০২৫ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থ পাচার বন্ধে চুনোপুঁটি নয় ধরতে হবে রাঘববোয়ালদের

|
১২:১৭ এ.এম | ২২ নভেম্বর ২০২২


প্রতিবছর নানা কারসাজিতে কী পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব সরকারের কাছে নেই। যখন বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সূত্রে এসব পাচারের খবর চাউর হয়ে যায় কিংবা বাজারে ডলার-সংকট দেখা দিলে কর্তা ব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসেন। সরকারের নীতি-নির্ধারকেরা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার আওয়াজ দিতে থাকেন। তারপর সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে বা চলতে দেওয়া হয়।
স¤প্রতি ডলার-সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, সারা দেশে অবৈধ ৭০০ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে।
বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে ঢাকার তিনটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একটি মামলায় এক ব্যবসায়ীর ১৪ বছর কারাদন্ড হয়েছে। তিনি ১২ কোটি টাকা পাচারের সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছিলেন। যেখানে দেশে বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান আছে ২৩৫টি, সেখানে ৭০০ অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান কীভাবে এত দিন ব্যবসা করল? আবার যেসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সরকারের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের সততাও পরীক্ষিত নয়। কঠিন সত্য হলো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়, তার কয়েকগুণ বেশি অর্থ পাচার হয় ‘অন্য উপায়ে।’ বিশেষ করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রপ্তানি পণ্যের দাম কম দেখিয়ে এবং আমদানি পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বিবিসিকে বলেন, দেশের বাইরে যখন টাকা পাচার হয়, তখন কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম বেড়ে যায় এবং দেশের মুদ্রা অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে, ২০১৫ সালে বাণিজ্য কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিদেশে পাচার হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বছরের মাঝামাঝি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে সেখানকার ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত অভিযান চালিয়ে অর্থ পাচার ঠেকানো যাবে না। সার্বক্ষণিক নজরদারি জারি রাখতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে বিদেশে একবার অর্থ পাচার হলে, সেটি ফেরত আনা খুবই কঠিন কাজ। বরং সরকারকে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কেউ বিদেশে অর্থ পাচার করতে না পারে।
সিআইডির দায়ের করা সে মামলায় বলা হয়েছে, যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। সেই মামলার বিচার হওয়ার আগেই তিনি ‘কারামুক্ত’। একদিকে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান, অন্যদিকে চিহ্নিত অর্থ পাচারকারীদের ছাড় দেওয়া যেমন স্ববিরোধিতা, তেমনি সরকারের অর্থ পাচারবিরোধী অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। অর্থ পাচারের দায়ে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের যথোচিত শাস্তি হোক, এটা সবাই চায়। একই সঙ্গে যাঁরা নানা কারসাজির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন, তাঁদের পাকড়াও করার চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। চুনোপুঁটিদের ধরে রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দিলে অর্থ পাচার কখনোই বন্ধ হবে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ