খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

ডায়রিয়া রোগী ফেরত, সরকারি ওষুধ পাচ্ছে না, অভিযোগ স্বজনদের

মীরেরডাঙ্গায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল নিজেই এখন ব্যাধিতে আক্রান্ত

মোশারেফ হোসেন, খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি |
০১:৩১ এ.এম | ২৩ নভেম্বর ২০২২


খুলনা বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা শিশুদের ক্যানোলা পরাতে পারে না তবে রোগীদের স্যালাইন পুশ করছে ক্লিনার। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দোহাই দিয়ে বিশেষায়িত এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ডায়রিয়ার শিশু রোগীদের ফেরত দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রোগীরা পাচ্ছে না সরকারি ওষুধ। অভিযোগ আছে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা অশোভন আচরণ করে থাকেন। এছাড়াও নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের পাশাপাশি গবাদি পশু গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটির চত্বর। 
প্রতিষ্ঠানটির নানা জটিলতার মধ্যে চরমভাবে দেখা দিয়েছে নানা অনিয়ম, ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। অপর দিকে অরবিন্দু নামে এক কর্মচারিকে দুর্নীতির দায়ে অত্র হাসপাতাল থেকে ২০০৭ সালে মাগুরা মোহাম্মদপুরে বদলি করা হয় কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে পুনরায় ফিরে আসেন সাবেক স্থানে। সেই থেকে অদ্যাবধি এই হাসপাতালে কর্মরত আছেন। আর তারই ছত্রছায়ায় একাধিক নার্স ও স্টাফ এই হাসপাতালকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে নার্সদের কর্মস্থলেই চলছে রান্না-খাওয়া। 
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে সেবা প্রত্যাশিদের সাথে কথা বলে রোগীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গত ২১ নভেম্বর সোমবার হাসপাতালের সামনে আসতেই গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, কারণ প্রধান ফটক দিয়ে দলে দলে প্রবেশ করছে গরু-ছাগল। প্রায় ১৫/২০টি গরু ও ছাগল সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করছে হাসপাতালের অভ্যন্তরে। কিছু সময় অপেক্ষার পর হাসপাতালের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখা হয় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এক শিশুর অভিভাবকের সাথে। তিন-চার বছরের শিশু কে নিয়ে মোসাঃ তানিয়া খাতুন এসেছেন নওয়াপাড়া থেকে। 
তিনি জানান তার শিশুটির ডায়রিয়া হয়েছে, দুইদিন যাবত তার পায়খানা ও বমি হচ্ছে। বাচ্চাটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে এসেছিলাম কিন্তু ডাক্তার-নার্স বলছে এখানে শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, আপনি শিশু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো না বলে আমার সন্তানকে ভর্তির জন্য অনুরোধ করা হলে ভর্তি করা যাবে বলে ফিরিয়ে দেন নার্সরা। কথা হয় হাসপাতালে ভর্তি এক রোগির স্বজনের সাথে। 
যশোর থেকে আসা শান্তা ইসলাম নামের এ নারী জানান, আমার খালুকে এখানে ভর্তি করেছি। এখানে সরকারি ওষুধ না দিয়ে বাইরের থেকে নিয়ে আসতে বলেন। আমি সব ওষুধ কিনে আনি কিন্তু নাপা গেটের বাইরের দোকানে না পাওয়ায় ফিরে আসি। পরে আমি তাদেরকে আপাতত আমাকে নাপা ওষুধের ব্যবস্থা করে দিতে বলায় আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত খাবার পানি বা ওষুধ মিলছে না। 
হাসপাতালের ভিতরে অবস্থা আরও ভয়াবহ। একজন রোগীকে স্যালাইন পুশ করছে মিলন দাস নামের এক ব্যক্তি, এগিয়ে গিয়ে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান আমি হাসপাতালের স্টাফ তার পদবী হচ্ছে ক্লিনার। এ সময় অফিস কক্ষে দু’জন নার্সকে বসে গল্প করতে দেখা যায়। খূুবই নোংরা পরিবশে বিরাজ করছে। টয়লেটগুলো সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী বাথরুমে প্রবেশ করার মতো পরিবেশ নেই। যেন নিজেই সংক্রমিত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালটির নানাবিধ সমস্যার মধ্যে আবাসিক এবং জনবল সংকট প্রকট, ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে লিখিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালটির বাউন্ডারী ভেঙে যাওয়ায় এবং গার্ড না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত ভাবে আছে। সন্ধ্যার পর এখানে বহিরাগতদের আড্ডা চলে। 
ওষুধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চাহিদার থেকে প্রাপ্তি কম, যা আসে সবই রোগীদেরকে দেওয়া হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্যানোলা দেওয়ার মতো অভিজ্ঞ স্টাফ আমাদের এখানে নেই স্বীকার করে তিনি বলেন, যারা আছে কতটুকু কি পারে এটাও বিষয়। 
শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় চিকিৎসা দিতে সমস্যার কথা অপকটে স্বীকার করেন হাসপাতালের এই চিকিৎসক। তিনি জরুরি ভিত্তিতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন বলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ