খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২

কপ২৭-এর প্রতিশ্র“তি রক্ষা করতে হবে

|
১২:৪৮ এ.এম | ২৪ নভেম্বর ২০২২


ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। ফলে মরু অঞ্চলের বরফ বেশি করে গলছে এবং বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। বহু দ্বীপ দেশ ও বিভিন্ন দেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা। আবহাওয়া ক্রমেই চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। ঝড়ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ¡াসের সংখ্যা ও তীব্রতা দু’টিই বাড়ছে। বন্যা, খরাসহ নানা কারণে জানমালের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় আশা করা হয়েছিল, মিসরের শার্ম এল শেখ শহরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ২৭ বৈশ্বিক তাপমাত্রার অব্যাহত বৃদ্ধি রোধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে একটি কঠোরভাবে আন্তর্জাতিক ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবে। এ ক্ষেত্রে মানুষ হতাশ হয়েছে। তবে সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্তটিকে একটি উলে­খযোগ্য অগ্রগতি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলো সেই প্রতিশ্র“তি সঠিকভাবে পালন করে যাবে এমনটাই প্রত্যাশিত। 
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসেও প্রায় প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে এরই মধ্যে তীব্র খরা ও মরুকরণ প্রক্রিয়ার আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠেছে। এসব কারণে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। 
ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় দুই কোটি শিশু প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মানওয়াচের হিসাবেও বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সপ্তম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র। প্রতিবেদন অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে বাংলাদেশে ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকার সম্পদের, যা মোট জিডিপি’র ১.৩২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়েও অনেক বেশি এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আরো ওপরের দিকে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ বৈশ্বিক নানা তহবিল থেকে যে ধরণের সহায়তা পাওয়া প্রয়োজন ছিল, সেই তুলনায় প্রায় কিছুই পাচ্ছে না। উন্নত দেশগুলোও তাদের প্রতিশ্র“ত তহবিল ঠিকমতো ছাড় করে না। অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড মিটিগেশন ফান্ডে প্রতিবছর উন্নত দেশগুলোর ১০০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও সেই অর্থ ঠিকমতো পাওয়া যায় না। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলো। যেসব দেশ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের দায় নেই বললেই চলে। তাই এসব দেশের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ থেকে বাংলাদেশ উলে­খযোগ্য সহায়তা পাবে। বাংলাদেশকেও এ ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে হবে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রাপ্ত তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ