খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১ আশ্বিন ১৪৩২

১০ মাসে ধর্ষণের শিকার ৬৪৩ নারী ও কন্যা শিশু

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৫৫ পি.এম | ২৪ নভেম্বর ২০২২


দেশের নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে সারাদেশে তিন হাজার ৬৭ জন নারী ও কন্যা শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৪৩ জন ধর্ষণ এবং ২০৫ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি যৌন নির্যাতন ও তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক আলোচনা ও গবেষণাপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ১৩টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র প্রতি মাসে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রকাশিত তথ্য বলা হয়েছে, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে।

নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ৬৭ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৩ জন নারী ধর্ষণ এবং ২০৫ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর আটজন আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া ১২৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, ৩৩ জনকে শ্লীলতাহানি, ১১০ জনকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে। উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ১০৪ জনকে। এর মধ্যে ৭ জন উক্ত্যক্ত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।

এছাড়া চলতি বছর পাচার হয়েছে ১০৮ নারী ও কন্যা। এসিড দগ্ধ হয়েছেন ১৫ জন, অগ্নিদগ্ধ ১৩ জন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ১০ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৮ জন, যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন ৬৩ জন। একইসঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮৮ নারী। আর পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০ নারী।

এমন পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যা শিশু নিপীড়ন বন্ধে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী নির্যাতন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা এটি বন্ধের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিবছর নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পক্ষকালব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। এবছর 'নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি' এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পক্ষ পালনের মধ্য দিয়ে নারী ও কন্যার প্রতি দৃশ্যমান ও অদৃশ্য নানা মাত্রার সহিংসতা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ডা. ফওজিয়া আরও বলেন, ‘২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, সারাবিশ্বে ৮১ হাজার নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় একজন নারী হত্যা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নারী নির্যাতন মুক্ত দেশ গড়তে চাই। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'

পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা জরুরি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, 'করোনাকালে নারী ও পরুষ সবাই ঘরবন্দি ছিল। ওই সময় আর্থিক টানাপোড়েনের জন্য নারী নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, আমাদের সমাজে পারিবারিক নিপীড়নকে এখনও ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফলে কোনো পরিবারে নির্যাতন হলে অন্যরা কোনো কথা বলেন না৷ পরিবারের নারীও এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়। ফলে এ সংক্রান্ত আইন থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।'

পারিবারিক নিপীড়ন বিরোধী আইন থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না উল্লেখ করে মালেকা বানু বলেন, 'পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে সাধারণ মানুষ এমনকি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল অনেকেই এই আইনের প্রয়োগের বিষয়ে জানেন না। ফলে আইন হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না।'

্রিন্ট

আরও সংবদ