খুলনা | শনিবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

উপকূলে নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ৪৫০ ঘরের ২৫৫টিই ফাঁকা

|
১২:১৪ এ.এম | ২৩ জানুয়ারী ২০২৩


মানুষের নাগরিক অধিকারের মধ্যে তার বাসস্থানটিই প্রধানত আগে আসে। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করাই ছিল বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প করে কয়েক লাখ পরিবারকে ইতিমধ্যে ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গায়  প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে সেখানে প্রকল্পটি অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট নয়। ফলে বছর না ঘুরতে সেসব ঘর ছেড়ে যাচ্ছে সুবিধাভোগীরা। 
যেমনটি আমরা দেখছি খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার  নদীর চরে নির্মিত তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয় কোটির বেশি টাকা। কিন্তু ঘর তদারকি ও সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সেগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে মটবাড়ী গ্রামের কয়রা নদীর চরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭০ ঘরের ১১০টিই ফাঁকা পড়ে আছে। বাগালী ইউনিয়নে ৬০টি ঘরের মধ্যে ৪৫টির মানুষ অন্য স্থানে চলে গেছেন। কয়রা সদর ইউনিয়নে ২২০টি ঘরের ১০০টিতে কেউ বসবাস করেন না। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো অপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নির্মাণ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর সমস্যা একই ধরণের। কোনোটিতেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ, যোগাযোগের রাস্তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুই নেই। নাজুক বাঁধের কারণে নদীর জোয়ারের পানিতে অধিকাংশ ঘরের মেঝের মাটি সরে গেছে। দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানের দাবি করে এলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে এমন মানবেতর জীবনযাপন করতে কেউ সেসব ঘরে থাকতে চাইবে?
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ভুক্তভোগী বাংলাদেশের এ অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু সরকারের যথাযথ মনোযোগের অভাবে কয়রার বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়তে হচ্ছে। সেখানে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো অনেকের জন্য বড় আশীর্বাদ হতে পারত। কিন্তু অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সেটিও সম্ভব হলো না। দিন শেষে তাদের উদ্বাস্তু হওয়ারই দশা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের কোটি কোটি টাকাও অপচয় হলো।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, তিনি উপজেলায় নতুন যোগদান করেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে বসবাসরত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। শিগগির ঘরগুলো বসবাসের উপযোগী করতে তিনি তদারক শুরু করবেন। আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। আমরা আশা করব, দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোকে বসবাসের উপযোগী করে তুলবেন তিনি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও আমরা কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই। কয়রার প্রাকৃতিক দুর্যোগপীড়িত মানুষগুলোর পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিন।
 

প্রিন্ট

আরও সংবাদ