খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার হালচাল

জনবল সংকটে ছয় মাসের অধিক হচ্ছে না এক্স-রে ও আল্ট্রাসনো, ভোগান্তিতে রোগীরা

বশির হোসেন |
০১:১১ এ.এম | ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এক্স-রে করার জন্য অত্যাধুনিক মেশিন রয়েছে দু’টি। একটি আল্ট্রাসনো মেশিন থাকলেও রেডিওলোজিস্ট-এর অভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ মেশিন ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ রোগীরা। জেলা সদর হাসপাতালের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন এই ধরনের অতি প্রয়োজনীয় সেবা বন্ধ থাকা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সিটি মেয়রের আদেশের পরও আল্টাসনো বিভাগে চিকিৎসক না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা। 
অন্যদিকে হাসপাতালে নানা অযুহাতে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নিজেদের পছন্দমতো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেবার মান, অনিয়ম, ভোগান্তির বাইরেও এ হাসপাতালে দুঃখগাঁথা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। এসব কারণে হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্রের সিন্ডিকেট।
অভিযোগ উঠেছে একটি মহল এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জনস্বার্থে কথা বিবেচনা করে জেলা প্রশাসনের উচিত দ্রুত বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 
হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে খুলনা আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মুরাদ বলেন, আমাদের রেডিওলোজি চিকিৎসক নেই। মাঝে মধ্যে আমরা এক্সরে করি কিন্তু রিপোর্ট দিতে পারি না। আলট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, রেডিওলোজিস্ট চিকিৎসক বদলীর কারণে আপাতত ওই পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। 
মফিজুল হক বলেন, ভারি জিনিস উঠাতে গিয়ে মাজায় চোট লাগে। এরপর থেকে তীব্র যন্ত্রণা হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা। চিকিৎসকরা একটা এক্স-রে করতে দিচ্ছেন। এক্স-রে করাতে এসে জানতে পারি মেশিন নষ্ট। ক্ষোভ ঝেড়ে মফিজুল বলেন নামেই সরকারি হাসপাতাল। সব পরীক্ষা বাইরে থেকেই করতে হয়। 
গর্ভবতী রহিমা বেগম (ছন্দ নাম) বাচ্চা নড়া-চড়া না করায় তিনি গাইনী চিকিৎসকের কাছে আসেন। তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে দেন চিকিৎসক। চিকিৎসক তার মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করার জন্যও বলে দেন। হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বন্ধ রয়েছে। 
শুধু মফিজুল কিংবা রহিমা নন, এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগীর অভিযোগ অভিন্ন। নানা অজুহাতে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নিজেদের পছন্দমতো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের পাঠান এখানকার চিকিৎসকরা। বিশেষ করে এমন অভিযোগ বেশি বহির্বিভাগে গাইনী বিভাগে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার রিপোর্ট দেখান বলে জনশ্র“ত রয়েছে। ওই চিকিৎসক তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেন। ওই সেন্টার তাকে কমিশন দেন। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসা মেলে। 
গতকাল শনিবার হাসপাতালে এক্স-রে বিভাগে সকালে যেয়ে দেখা যায়, এমটি রেডিও মোঃ আব্দুর সবুর এক্স-রে বিভাগে নেই। ওই সময় তার মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। অফিস সহায়ক মোঃ লুৎফর বসে আছেন। এক্স-রে বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সে বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে উলে­খ করে তিনি বলেন ইউপিএস নষ্ট হওয়ার এক্স-রে হচ্ছে না। তবে এক্স-রে বন্ধ থাকার বিষয়ে এই অফিস সহায়কের কথার সাথে মিল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বিকেল ৩টায় আবারও এমটি রেডিও মোঃ আব্দুর সবুর মুঠোফোন দিলে তিনি রিসিভ করেন। এক্স-রে বন্ধ হওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, এক্স-রে (ডিআর) মেশিন ইউপিএস থেকে বিদ্যুৎ সাপ্লাই না হওয়ার কারণে অক্টোবর ৫ তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে। অপর এক্স-রে (সিআর) মেশিনটি গত জুন মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অবহিত করেছি। 
তিনি বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানে রেডিওলোজিস্ট চিকিৎসক ম্যাডাম বদলী হওয়ার পর থেকে ওই পরীক্ষার আর হচ্ছে না বলে তিনি উলে­খ করেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এক্স-রে (ডিআর) মেশিন যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে বন্ধ আছে এ বিষয়ে এমটি রেডিও মোঃ আব্দুর সবুর কর্তৃপক্ষকে বা অফিসে চিঠি দিয়ে অবহিত করেননি। 
খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সূত্রমতে, জুনিয়র কনস্যালটেন্ট ( রেডিওলোজিস্ট) ডাঃ জান্নাতুল নাহার ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ এই হাসপাতালে যোগদান করেন। তিনি ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর এখান থেকে বদলী হয়ে শহিদ আবু নাসের বিশেষায়িত্ব হাসপাতালে চলে যান। 
জানা গেছে, তিনি যখন যোগদান করেন তখন দেশে করোনা প্রকোপ ছিলো। ওই সময় সাধারণ রোগীদের জন্য আস্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষাও বন্ধ ছিলো। যার কারণে রোগীরা বেশি সুফল পায়নি।

্রিন্ট

আরও সংবদ