খুলনা | শনিবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

হাজারো রোগীর ভোগান্তি! : কাল সন্ধ্যায় বিএমএ’র সাধারণ সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত

চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, বিভাগীয় শহর খুলনায় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩২ এ.এম | ০৩ মার্চ ২০২৩


শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহর ওপর হামলায় অভিযুক্ত এএসআইকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত খুলনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে। একই সঙ্গে ডাঃ নিশাতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা।
নগরীর শেখপাড়ার হক নার্সিং হোমে ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহ কর্তৃক পুলিশ পতœী নুসরাতকে শ্লীলতাহানী চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয় বুধবার। এর আগে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে মামলা করেন ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহ। আর এরই জের ধরে বিভাগীয় শহর খুলনার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুরও অভিযোগ করছেন রোগীর স্বজনরা। টানা দুই দিন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। 
আজ শুক্রবার ছুটির দিন, তবুও কর্মবিরতিতে রয়েছেন চিকিৎসকরা। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিএমএ খুলনার সাধারণ সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন নেতৃবৃন্দ। অন্যদিকে, চিকিৎসকের উপর হামলার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এএসআই নাইমুজ্জামানকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২৫ ফেব্র“য়ারি রাতে শ্লীলতাহানী ও শিশুর অঙ্গহানীর অভিযোগে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গত বুধবার দুপুরে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন এএসআই নাইমুজ্জামানের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না। এ মামলায় ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহ ও হক নার্সিং হোমের মালিক ডাঃ নুরুল হক ফকিরকে আসামি করা হয়।  একদিন আগে গত মঙ্গলবার শহিদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশাত আব্দুল­াহ বাদী হয়ে নুসরাত আরা ময়নার স্বামী পুলিশের এএসআই নাইমুজ্জামান শেখের বিরুদ্ধে ওই থানায় মামলা করেন। ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহকে মারপিট ও ক্লিনিক ভাঙচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের দাবিতে গত বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালে কর্মবিরতিতে যায় বিএমএ খুলনা। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে বিভাগীয় শহর খুলনায় ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। একজন চিকিৎসক ও পুলিশ পতœীর ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছে কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি, যা অব্যাহত থাকবে। এতে করে খুলনা সরকারি হাসপাতালগুলোতে আগত রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন স্বজনরা। 
গতকাল বৃহস্পতিবারও খুলনার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। বিকেলে বিএমএ খুলনার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় সাধারণ সভার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে বিএমএ খুলনা। অন্যদিকে, গতকাল দুপুরেও খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পুলিশ পতœী।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মমতাজুল হক জানান, দু’টি মামলার তদন্ত চলছে। এখনো কাউকে আটক-গ্রেফতার করা হয়নি।
খুমেক হাসপাতাল : অব্যাহত কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের টিকিট দেয়া শুরু হলেও ১০টার দিকে হঠাৎ বন্ধ কওে দেওয়া হয়। কর্মবিরতি পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সভায় বসে বিএমএ খুলনা।
খুমেক হাসপাতালে টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা রিনা বেগম জানান, সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল টিকিট দেয়ার জন্য। আমরা ৪০টির মতো টিকিটও দিয়েছি রোগীদের। এরপর আমাদের জানানো হয়, বেলা ১১টায় সভা অনুষ্ঠিত হবে, সভা শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর যারা টিকিট সংগ্রহ করেছেন, তাদেরকে জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ডাঃ নিশাত আবদুল­াহর ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৬টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎসকরা। এতে করে সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও সেবা পাচ্ছেন না।
এএসআই নাঈম ক্লোজড : ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহ্’র উপর হামলার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের এএসআই নাইমুজ্জামান শেখকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, এএসআই নাঈম শেখকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কর্মবিরতি অব্যাহত : শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহর ওপর হামলায় অভিযুক্ত এএসআইকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত খুলনায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলবে। একই সঙ্গে ডাঃ নিশাতের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএমএ’র নির্বাহী পরিষদের বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশকে আমরা প্রতিপক্ষ বানাতে চাই না। কিন্তু পুলিশ নাঈমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইতে চাইতে আর পারছি না। তার কাছে আর কোনও আবেদন করবো না, স্মারকলিপিও দেবো না। এবার স্মারকলিপি দেবো প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত এএসআই নাঈমকে গ্রেফতার না হওয়া ও ডাঃ নিশাত আব্দুল­াহর নামে মিথ্যা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে।
‘আগামী ৪ মার্চ বেলা ১১টায় আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। একই দিন সন্ধ্যায় বিএমএ মিলনায়তনে সাধারণ সভা হবে। ওই সভা থেকে দাবি আদায়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেখানে চিকিৎসকদের গণপদত্যাগের সিদ্ধান্তও হতে পারে।’
এ সময় বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মেহেদী নেওয়াজসহ চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি শুরু করেন চিকিৎকরা। বৃহস্পতিবারও হাসপাতালে যাননি কোনো চিকিৎসক। টানা দুই দিন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় অবর্ণীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ