খুলনা | শুক্রবার | ৩১ মার্চ ২০২৩ | ১৭ চৈত্র ১৪২৯

সংবাদমাধ্যম নিয়ে সিইসি : সমন্বিত নীতিমালার নামে কালাকানুন নয়

|
১২:০৯ এ.এম | ১৭ মার্চ ২০২৩


নির্বাচনের দিন সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন নিয়ে গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে নির্বাচন কমিশন। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল যেসব কথা বলেছেন, তা স্ববিরোধী ও বিভ্রান্তিমূলক। তিনি একদিকে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের বাঁধাগুলো দূর করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন, অন্যদিকে গণমাধ্যমের কর্মকান্ডকে ‘সার্বিক স্বার্থে, জনস্বার্থে’ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হলে সেটাও দেখার কথা বলে মন্তব্য করেছেন।
নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য সমন্বিত নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু সেই নীতিমালা যদি সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে থাকে, তা মানা হবে না। নীতিমালার অর্থ সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া নয়। গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উখে করে সিইসি বলেন, অবাধ বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের সুযোগ থাকলে স্বচ্ছতা অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়। তথ্য সংগ্রহে সংবাদকর্মীদের বাঁধা দেওয়া হলে তাঁদের মনে হবে, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। প্রশ্ন হলো এই ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ অবস্থা দূর করার দায়িত্ব কার? নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়, তাহলে এ ব্যাপারে তাদেরই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ভোটের দিন সারা দেশে মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের গতি ধীর করা নিয়ে সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আপাতদৃষ্টে ইতিবাচক হলেও দায় এড়ানোর প্রবণতা আছে।
তিনি বলেন, এটা (গতি ধীর) নির্বাচন কমিশন করে, না সরকার করে, না কোনো মন্ত্রণালয় করে, তা জানেন না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তো কমিশনকে বিষয়টি জানতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘আমরা ইন্টারনেটের গতি ধীর করি না’ কিংবা ‘না করলেই ভালো হয়’ এ ধরণের সদুপদেশে কোনো কাজ হবে না। যাঁরা ইন্টারনেটের গতি ধীর করার কাজে নিয়োজিত, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন কাজ না করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তাও দিতে হবে ইসিকে।
মতবিনিময় সভায় সিইসি অত্যন্ত আপত্তিকর যে কথা বলেছেন, সেটি হলো গণমাধ্যমের কর্মকান্ডকে ‘সার্বিক স্বার্থে’, ‘জনস্বার্থে’ নিয়ন্ত্রণ করার ইঙ্গিত। জনস্বার্থে কথাটি সাধারণত ক্ষমতাসীনেরা ব্যবহার করেন। সিইসির মুখে সেই ক্ষমতাসীনদের ভাষার প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে, যা কেবল অনাকাক্সিক্ষত নয়, উদ্বেগজনকও। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে যেটি জনস্বার্থ, সেটি সাংবাদিক কিংবা সাধারণ মানুষের কাছে না-ও হতে পারে।
পূর্বাপর সরকার জনস্বার্থের নামে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা রকম কালো আইন জারি করেছে। এসব আইনের পটভূমি যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করাই একমাত্র উদ্দেশ্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এ ক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন জনস্বার্থের নামে সে রকম কোনো কালাকানুন জারি করতে চাইছে কি না, সেটাই প্রশ্ন। অন্যথায় সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নে ‘জনস্বার্থ’ ও ‘সার্বিক স্বার্থে’ বিষয়টি সামনে এল কেন?
অতএব, নির্বাচনী কাজে সাংবাদিকেরা বাঁধাগ্রস্ত হন, এমন কোনো বিধিবিধান জারি করা যাবে না। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি নির্বাচন যতই কাছাকাছি আসছে, ইসির পদাধিকারীদের ভাষাভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। অতীতে তাঁরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর যতটা জোর দিতেন, এখন তা দিচ্ছেন না। বরং বিরোধী দল নির্বাচনে না এলে তাদের কিছু করণীয় নেই বলে এলান জারি করছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সমতল মাঠ থাকা দরকার, সেটি তাঁরা তৈরি করতে পেরেছেন কি?

প্রিন্ট

আরও সংবাদ