খুলনা | শুক্রবার | ৩১ মার্চ ২০২৩ | ১৭ চৈত্র ১৪২৯

ওয়ার্ড পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা, ঠাঁই পায়নি মঞ্জুর অনুসারীরা

অসন্তোষ বাড়ছে নগর বিএনপি’তে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৪ এ.এম | ১৮ মার্চ ২০২৩


খুলনা মহানগর আহবায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পর ওয়ার্ড পর্যায়ে দল পুনঃগঠন করছে বিএনপি। এসব কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। আবার, নগর বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও মতপার্থক্য দৃশ্যমান। স্বাক্ষর ক্ষমতা থাকলেও ওয়ার্ড পর্যায়ে আহবায়ক কমিটি ঘোষণার বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেই নগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহীরের। ফলে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় মন ভাঙছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। অসন্তোষ বাড়ছে নগর বিএনপি’তে। তবে এখনই এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না পদ বঞ্চিতরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক মোঃ ইব্রাহিম হাওলাদার ও সদস্য মোঃ গফফার বিশ্বাস পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে ইব্রাহিম হাওলাদার বলছেন, ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ৫নং যুগ্ম-আহবায়ক করায় আমার মান-সম্মান ক্ষুণœ করা হয়েছে। ২১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র আহবায়ক মোল­া ফরিদ আহমেদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভারতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে পদত্যাগ করবেন বলে জানান তিনি।
আবার ভিন্ন চিত্র অন্যদিকে, নগরীর ২৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আযমখান কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস মেজবাহ উদ্দিন মিজুকে রাখা হয়নি কোন কমিটিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মেজবাহ উদ্দিন নন; ওয়ার্ড পর্যায় থেকে খুলনা বিএনপিকে যারা সংগঠিত করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের সিংহভাগ নেতাদের মহানগরের নতুন ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে ঠাঁই হয়নি।
গত ৯ মার্চ রাতে মহানগরের ২০টি ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নে এসব কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরআগে গত বছর ১ মার্চ মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। সেখানেও মহানগর ও থানা বিএনপি’র সাবেক নেতাদের বাদ দেয়া হয়। এবার বাদ পড়লেন ওয়ার্ড কমিটির ত্যাগী নেতারা। 
এদিকে, নতুন কমিটিতে যাঁরা পদ পেয়েছেন, তাদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। নগর বিএনপি’র একাধিক নেতার অভিযোগ, ওয়ার্ড কমিটি করতে গঠিত সাংগঠনিক কমিটি যে সুপারিশ জমা দিয়েছিল, অনেক ওয়ার্ডে তা মানা হয়নি। মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন নিজের লোকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করো কমিটি করেছেন। 
স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানান গেছে, মূলতঃ সব কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন প্রায় তিন দশক ধরে মহানগর বিএনপি’র দায়িত্বে থাকা সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁকে শফিকুল আলম মনাকে সরিয়ে আহবায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়ার পর সংবাদ সম্মেলন করায় ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর মঞ্জুকে দল থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্র।
সদ্য ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মঞ্জুকে কোণঠাসা করতে মহানগর ও ওয়ার্ড কমিটিতে আস্থাভাজনদের আনার চেষ্টা করছেন বর্তমান নেতারা। সাবেক ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে গিয়ে কয়েকটি ওয়ার্ডে নেতা খুঁজতে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। কমিটি পূর্ণ করতে হয়েছে মহিলা দল ও যুবদল নেতাদের দিয়ে। অনেক ওয়ার্ডেই থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদধারী যুবদল নেতাদেরকে সদস্য করা হয়েছে ওয়ার্ড বিএনপিতে । 
জানা গেছে, ১৭নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এসএম শাহজাহানের রাজনীতি শুরু জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তিনিও নতুন ওয়ার্ড কমিটিতে নেই। ১৬নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সাদিকুর রহমান সবুজ বা শেখ জামিরুল ইসলামও নেই কমিটিতে। অথচ প্রতিটি কর্মসূচিতে তাঁদের সামনের সারিতে দেখা যায়। 
ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামের চেয়ে মহানগর সদস্য সচিবের নিজস্ব লোককেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পদ বঞ্চিতদের। ২০নং ওয়ার্ডের নতুন আহবায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ ছিলেন সোনাডাঙ্গা থানা যুবদলের সভাপতি প্রার্থী। তাকে ওয়ার্ড বিএনপিতে পদ দেয়ায় যুবদল নেতারাও হতাশ। ওই ওয়ার্ডে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে গিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। দেখা গেছে, আসাদের চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের প্রবীণ নেতাদের রাখা হয়েছে তার নিচের পদে। সদস্য করা হয়েছে থানা ও ওয়ার্ড যুবদলের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা নেতাদের। 
দলের সোনাডাঙ্গা থানা সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ জানান, রাজপথে যারা রক্ত ঝরিয়ে খুলনায় বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা এখন বিএনপি’র কোনো পদে নেই। ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব এখন প্রতিদিন আদালতে মামলার হাজিরা দেয়া আর চোখের পানি ফেলা।
ওয়ার্ড কমিটি করতে মহানগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে ১১টি সাংগঠনিক টীম করা হয়েছিল। নগরীর ২২, ২৩ ও ২৭নং ওয়ার্ড সাংগঠনিক টীমের প্রধান ছিলেন নগর বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ। তিনি জানান, আমরা যে তালিকা জমা দিয়েছি, তাতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিএনপিতে এখন পকেটের মধ্যে পকেট।
নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, চলমান আন্দোলনে যারা অংশ নিচ্ছেন, মামলার আসামি হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। প্রাথমিক সদস্য ফরম বিতরণের সময় যাঁরা আসেননি, দল ত্যাগ করেছেন, যাঁরা আমাদের মানেন না, তাঁদের কমিটিতে নিয়ে কী করবো? 
নিজের লোকজনের কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সাংগঠনিক কমিটি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাদের নিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। হয়তো দু/একটি নাম জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী ওপরে নিচে নামানো হয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি নগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহীর।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা নগর বিএনপি’র তিন সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ২০২২ সালের ১৩ ফেব্র“য়ারি খুলনা মহানগর বিএনপি’র ৩১টি ওয়ার্ড ও তিনটি থানা কমিটি বিলুপ্ত করেন আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ