খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক

|
১২:৩৯ এ.এম | ২২ মার্চ ২০২৩


সড়কে আবারও ১৯ জনের অকালমৃত্যু। ১৯ পরিবারে আহাজারি, অপূরণীয় শূন্যতা। বাস মালিকের লাভের ও লোভের বলি ১৯টি প্রাণ। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ব্যাংকের কর্মকর্তা, গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক, ঠিকাদার-ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে পরিবারগুলো অসহায় অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে। ১৯টি পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু কি মেনে নেওয়া যায়?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে বাসটি গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় তিনজন মারা যায়। এরপর থেকে বাসটির চলাচলের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপরও বাসটি মহাসড়কে চলাচল করে কিভাবে। বাসের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিশ্চয়ই জানা যাবে, কী করে তিনি ফিটনেস সনদবিহীন গাড়ি রাস্তায় চালাচ্ছিলেন। কী করে সব ম্যানেজ করছিলেন। মূলত চালকের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। চালকের গাড়ি চালনা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হচ্ছে না। আইন থাকলেও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। এতে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। রবিবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে অনেকে বলছে, চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কারণ আগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়েছেন তিনি। রবিবার এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি বাঁক খেয়ে রাস্তা থেকে ছিটকে সোজা নিচে পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কিন্তু কোনো টানা রেলিং ছিল না।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পরও বিশৃঙ্খলা কমেনি। অরাজকতা, যাত্রী ভোগান্তি কমেনি। কাঙ্খিত মাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি। যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং সেভ দ্য রোডএই দুই সংগঠন বলছে, ২০২২ সালে গড়ে প্রতিদিন সড়কে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপদ সড়ক চাই-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২৯ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে কর্মঘণ্টা না মানা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চালকের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। চালকের গাড়ি চালনা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হচ্ছে না। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পরিবহন শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে বলেছে। আইন থাকলেও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ। সব ধরণের যানবাহন মিলিয়ে চালকের সংখ্যা ৪০ লাখের কাছাকাছি। চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন ভালো জানে না। মাদারীপুরের শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে ১৯ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গোপালগঞ্জের ইমাদ পরিবহনের মালিককে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা কি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে? দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ