খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

রমজানে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাবার নিশ্চিত হোক

|
১২:০২ এ.এম | ২৫ মার্চ ২০২৩


খাদ্য মানুষের অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকার। খাদ্যগ্রহণ ছাড়া মানুষসহ কোনো প্রাণিই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে ওই খাবার অবশ্যই হতে হয় বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজাল মিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে থাকে। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যেকের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বিশুদ্ধ খাবারপ্রাপ্তি এখন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ভেজালকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তিও। শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। ভেজাল রোধে দরকার ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা, প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, সামাজিক প্রতিরোধ, নৈতিক শিক্ষা, উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সব ধাপে নজরদারি, ভেজালবিরোধী আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরালো করা এবং ব্যবসায়ীদের ভালো মানসিকতা। তবে খাদ্যে ভেজাল রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
রমজান মাসে অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ খাবার খেয়ে কেউ যেন অসুস্থ না হয় এদিকে সরকার, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকেই সচেতন হতে হবে। ইফতার ও সেহরিতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন, কেমিক্যালমুক্ত ফল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহনীয় মূল্যে বিক্রি করতে হবে দোকানদার ও বিক্রেতাদের। এ বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। কারণ শুধু ভেজাল খাদ্যগ্রহণের ফলে দেশে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিবছর দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতীর শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাদ্যগ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়। রোজাদারদের সুবিধার্থে সুপেয় খাবার পানি সরবরাহ, দ্রুত বর্জ্য অপসারণ, মশার ওষুধ ছিটানো, নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা নিশ্চিত করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রমজানে খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় বিক্রি হওয়া অধিকাংশ খাবারই ভেজাল। চাল-ডাল-তেল-লবণ থেকে শুরু করে শাকসবজি, ফলমূল, শিশুখাদ্য সবকিছুতেই ভেজাল। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেমন সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন; তেমনি ভোক্তাদেরও সচেতন এবং দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিবছর রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচুর ইফতারজাতীয় খাবার বিক্রি হয়। এ সুযোগেই মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ইফতারিতে ভেজাল মেশায়। খাদ্যে ভেজাল এমন একটি নীরব ঘাতক যা ধীরে ধীরে সুস্থ মানুষকে সুস্থধারা থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশের অধিকাংশ মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে নানা ধরণের ইফতারির পসরা নিয়ে বসবেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী। ইফতারিসহ সব ধরণের খাদ্যে ভরে উঠবে ফুটপাত থেকে ছোট-বড় হোটেল। খাবারকে আকর্ষণীয় করার জন্য অনেক বিক্রেতা বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত ক্ষতিকর রঙ পর্যন্ত ব্যবহার করে থাকে। রাস্তায় তৈরি কোমল পানীয়তে অনেক সময় আলকাতরার রঙও ব্যবহৃত হয়। এসব খাবারে আরও থাকে তামা, লৌহ ও সীসার মতো ভারী ধাতু। তা শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। 
খাদ্য উৎপাদনের ফসলেও কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ ও মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারে খাদ্য দূষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে অনেক মজুদদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা খাদ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক ফরমালিন, কার্বাইড, ইথোফেন, কীটনাশক, কাপড়ের রঙ মেশাচ্ছে; মেশানো হচ্ছে হরমোন ও এন্টিবায়োটিক। দেশের প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। যে পণ্যের দাম যতবেশি বাড়ে, ওই পণ্যে ততবেশি ভেজাল মেশানো হয়। আর এই ভেজাল খাদ্য ও খাদ্যের বিষে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁঁকি; বাড়ছে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের রোগ। দূষিত খাবার ক্রমাগত গ্রহণের কারণে অকালে মানুষ মারা যাচ্ছে। ফলে কর্মক্ষম মানুষের অভাবে প্রকারান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সুস্থ থাকার জন্য ভেজালমুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার্থে সমাজকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভেজাল খাদ্য জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে পঙ্গুত্বের দিকে। দেশ ও জাতির সত্যিকার অর্থে উন্নতি চাইলে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ