খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহংকারের দিন আজ

|
১২:০৪ এ.এম | ২৬ মার্চ ২০২৩


আজ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০তম দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহংকারের দিন আজ। আজ সরকারি ছুটির দিন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। বাংলার  অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এদিন মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। 
এরপর ২৭ মার্চ অখ্যাত এক মেজর জিয়াউর রহমান (প্রেসিডেন্ট জিয়া) কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয় সেখানে উলে­খ ছিল’...ডিক্লেয়ার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ। অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর’র ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।
এর আগে ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উত্তাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে স্বাধীনতার লক্ষে ঐক্যবদ্ধ করেন। ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যা রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইয়াহিয়া খান সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক ব্যবস্থা বেছে নিলেন আর এখানেই পাকিস্ত—ানের সমাপ্তি হলো।’ রাত সোয়া একটার দিকে ট্যাঙ্ক সাজোয়া গাড়ি ও এক লরি সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। আর বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নিভিয়ে দেয়ার জন্য বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। এরপর এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়। আজ আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রয়াত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে আত্মসর্গ করা শহিদের প্রতি আর দেশ মাতৃকাকে হানাদার মুক্ত করতে যারা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং যারা সহায়-সম্পদ-সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাদের।

্রিন্ট

আরও সংবদ