খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন অভাব সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে

|
১২:০৪ এ.এম | ২৮ মার্চ ২০২৩


পানির অপর নাম জীবন। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করতে হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সা¤প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিনিয়ত কমছে নিরাপদ পানির উৎস। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২৩০ কোটি মানুষের সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে খরা ও বন্যা পানির সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলেছে। জরুরিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক যে সংকটের কথা বলেছে, এই সংকট এক দিনে তৈরি হয়নি। পৃথিবীর মোট পানির ৯৭.৫ শতাংশ হচ্ছে সামুদ্রিক পানি অর্থাৎ নোনা পানি। আর বাকি মাত্র ২.৫ শতাংশ স্বাদু পানি বা মিঠা পানি। এই ২.৫ শতাংশ স্বাদু পানি বা মিঠা পানির সবটা মানুষের হাতের কাছে নেই। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীর ৮০ শতাংশ বর্জ্য পানি কোনো প্রকার শোধন ছাড়াই সরাসরি প্রকৃতিতে উন্মুক্ত হয়ে তা স্বাদু পানির সঙ্গে মিশে যায়। পৃথিবীর বহু জায়গায় পানিতে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু, ক্ষতিকর জৈব পদার্থ ও বিষাক্ত রাসায়নিক বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া গেছে। বর্তমানে মাইক্রোপ্লাস্টিকস ও ফার্মাসিউটিক্যাল বর্জ্য ভীষণভাবে পানিদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ, পশু-পাখিসহ জলচর প্রাণির জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল বর্জ্য ক্ষতিকর। অনিরাপদ পানির প্রভাব ঠেকাতে প্রতিবছর বৈশ্বিক ব্যয় হচ্ছে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিতকরণ’ প্রতিপাদ্যে গত ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে নিরাপদ পানির উৎসর পাশাপাশি নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাও কমছে। বাংলাদেশে নদী, হাওর, বিল, লেক, পুকুর, বর্ষাকালীন জলাশয় ইত্যাদি মিলিয়ে এখনো প্রায় ৪৫ লাখ হেক্টর স্বাদু পানির জলাশয় রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরণের উৎস থেকে নানা ধরণের দূষক এসব জলাশয়ে ক্রমাগত মিশে কমবেশি দূষণ ঘটাচ্ছে।
অন্যদিকে দেশের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা ভালো নেই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অনেক নদী। কোনো মতে টিকে থাকা অনেক নদীতে পড়েছে দখলদারের থাবা। অনেক নদী হারিয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীগুলো পরিচর্যার অভাবে মরে যেতে বসেছে। বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারযোগ্য নয়। মাছ তো দূরের কথা, জলজ উদ্ভিদও জন্মে না বুড়িগঙ্গার পানিতে। শিল্পবর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে নদীর পানি। চট্টগ্রাম নগরীতে মোহরা পানি পরিশোধন প্রকল্পের পর এবার মদুনাঘাট পরিশোধন প্রকল্পের পানির উৎস অতিমাত্রায় লবণ শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে হালদা নদীর মোহরা পয়েন্টেও অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ পাওয়া গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল ক্রমেই সাগরের নোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষের পানীয় জলের সংকট ক্রমে তীব্রতর হচ্ছে। চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ভূগর্ভেও নোনা পানির অনুপ্রবেশ বাড়ছে। দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত চলে এসেছে নোনা পানি। ২০২১ সালে গণমাধ্যমের প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছিল, লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে উপকূলে মানুষসহ জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। একই সময়ে প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মোংলার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ৯ গুণ লবণ পাওয়া যাচ্ছে। খাল-বিল, নদীনালা, ডোবা, এমনকি ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণ মিলছে। দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রকৃতি ও পরিবেশ সংকটাপন্ন হওয়ার আগে বাংলাদেশের পানি সুরক্ষায় আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশে পানিসংক্রান্ত আইন ও বিধিগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ