খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে জমি বিক্রির চেষ্টা বাবা ও তিন ছেলের বিরুদ্ধে গাছ চুরির অভিযোগ

খুলনায় নব্য ভূমিদস্যু মান্নান হাওলাদারের উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৩৯ এ.এম | ২৯ মার্চ ২০২৩


খুলনা মহানগরীর হরিণটানা থানাধীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক এলাকায় আব্দুল মান্নান হাওলাদার নামে এক নব্য ভূমিদস্যুর উত্থান ঘটেছে। সে নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে একের পর এক জমি দখলে মেতে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখলের পাশাপাশি আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে জমি বিক্রি এবং নিরীহ লোকদের জমি থেকে গাছ কেটে চুরির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে অন্যের কাছে জমি বিক্রি করে অর্থ গ্রহণের পরেও তা বুঝিয়ে না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্তে আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে গাছ কেটে চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, ভূমিদস্যু আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে এলাকায় তার তিন ছেলে মোঃ আরিফ, মোঃ জাহিদুর রহমান ও মোঃ সোহাগ এবং বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ একটি ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে জমি দখলসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। প্রতিনিয়ত করছে সাধারণ মানুষকে হয়রানি। এমনকি তারা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) কর্তৃক নিবন্ধিত বেসরকারি আবাসিক প্রকল্প আরাফাত আবাসিক প্রকল্পের জমিও বেআইনিভাবে দখল এবং বিক্রির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমিদস্যু মান্নান হাওলাদার এতটাই বেপরোয়া যে সে নিজ স্বার্থের জন্য তার আপন সহোদর নান্নু হাওলাদারসহ নিজের শ্বশুর ও শ্যালকসহ আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করতে দ্বিধা করেনি। তার মামলার শিকার হয়েছেন তার আপন ভাই নান্নু হাওলাদার, ভাইপো রাজু হাওলাদার, শ^শুর আবু তালেব বিশ্বাস, শ্যালক আবু সাঈদ বিশ্বাস ও জাহিদ বিশ্বাস এবং প্রতিবেশী আব্দুর রশিদ মলি­ক। 
ভূমিদস্যু আব্দুল মান্নান হাওলাদার গত বছর খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উলি­খিত মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদান এবং তার জমিতে প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। আদালত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তাকে (নায়েব) তদন্ত-পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল এবং হরিণটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। আগামী ৪ এপ্রিল এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও আব্দুল মান্নান হাওলাদার স¤প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদ মৌজার বিআরএস ৫২৬নং দাগের জমি বিক্রির চেষ্টা করেছেন। স¤প্রতি ওই দাগের জমি বায়নার একটি সাইনবোর্ড সেখানে টানানো হয়েছে। সাইন বোর্ডে থাকা বায়নাকারী আরিফুল ইসলাম নামধারী ব্যক্তি নিজেকে র‌্যাবের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এভাবে আব্দুল মান্নান হাওলাদার বিরোধপূর্ণ ও আইনি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে জমি বিক্রি করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
উলে­খ্য, উলি­খিত জমিতে ইতিপূর্বে একটি মসজিদের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড দিয়ে জমিটি দখলে রেখেছিলেন আব্দুল মান্নান হাওলাদার। কিন্তু এখন সেই জমিতে মসজিদ না করে তা বিক্রির চেষ্টা করছেন।  বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট জমি মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে জমি মালিকরা হরিণটানা থানায় ভূমিদস্যু মান্নান গংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন। 
অপর দিকে, নগরীর গোবরচাকা মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত সুলতান আহমেদ খানের পুত্র মোঃ সরোয়ার আলম খান চক মথুরাবাদ মৌজার বিআরএস ৫২৫ ও ৫২৬ নং দাগের তার পৈতৃক জমি দখলের অভিযোগ এনে ভূমিদস্যু আব্দুল মান্নান হাওলাদারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুলনার যুগ্ম-জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতে বাটোয়ারা মামলা (৭৪/১৬) দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আদালত ২০১৭ সালের ৬ জুন এক আদেশে তফশিল বর্ণিত জমিতে দখল বিষয়ে উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এরপরও ভূমিদস্যু আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং তার তিন পুত্র মোঃ আরিফ, মোঃ জাহিদুর রহমান ও মোঃ সোহাগ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত বছরের ১১ মার্চ সকালে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরোয়ার আলমের জমিতে প্রবেশ করে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি মেহগুনি গাছ কেটে চুরি করে নিয়ে যায় এবং ৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফলজ নারকেল গাছ কেটে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় সরোয়ার আলম খান বাদী হয়ে ভূমিদস্যু আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং তার তিন পুত্র মোঃ আরিফ, মোঃ জাহিদুর রহমান ও মোঃ সোহাগকে আসামি করে ওই বছরের ২০ মার্চ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নালিশী মামলার আমলী আদালতে (হরিণটানা) মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং-১৮/২২)। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনার এসআই মোঃ শাহাদত হোসেন তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে গাছ কেটে চুরি করে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে-মর্মে উলে­খ করা হয়। 
অভিযোগে আরও জানা গেছে, ভূমিদস্যু আব্দুল মান্নান হাওলাদার ময়ূর ব্রীজ এলাকায় এক শিক্ষক দম্পতির জমিও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। ফলে অনেক আ্শা নিয়ে তারা জমি কিনলেও এই নব্য ভূমিদস্যুর কালো থাবার কারণে সেখানে তারা ঘর-বাড়ি করতে পারছেন না। এতে তারা চরম ক্ষোভ ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জমি মালিক কলেজ শিক্ষিকা হোসনেয়ারা মৌসুমীর স্বামী লকপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স ম নাসিম উদ্দিন মাহতাব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মান্নান হাওলাদার ৬৪৬নং দাগে জমি কিনে তাদের ৬৩১নং দাগে জোর পূর্বক দখল করে বসে আছেন। মান্নান হাওলাদার শাহাপুর কলেজের শিক্ষক অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের জমি দখল করেছেন। আর শহিদুল ইসলাম তার জমির মধ্যে ঢুকে পড়েছেন। মান্নানের কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। এ কারণে তিনি বাটোয়ারা মামলা করেছেন। কিন্তু এখনও কোন সমাধান হয়নি। 
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মান্নান হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

প্রিন্ট

আরও সংবাদ