খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই : ফায়ার সার্ভিস

অগ্নিঝুঁকিতে খুলনার অধিকাংশ মার্কেট-শপিংমল

আশরাফুল ইসলাম নূর |
০১:৪৭ এ.এম | ১৮ এপ্রিল ২০২৩


‘নিক্সন মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানে গত রবিবার রাতে হঠাৎ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। খবরটি মুহূর্তেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আমিও দোকান থেকে বেরিয়ে প্রতিবেশী ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ শুরু করি। কি না, কি হয়ে যায়-সে কারণে আমি আর নিক্সন মার্কেটের দিকে এগিয়ে যায়নি।’ 
গতকাল সোমবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন খুলনা বস্ত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন সেবা। গেল রবিবারের সে আগুন কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয়রা নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন; টুটপাড়া ফায়ার স্টেশন থেকেও একাধিক অগ্নিনির্বাপক ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবুও আতঙ্ক কাটছে না সাধারণ ব্যবসায়ীদের। রাজধানী ঢাকাতে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্থ খুলনার ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারাও বলছেন, খুলনার অধিকাংশ জনাকীর্ণ মার্কেট, শপিংমল, বিপনী বিতান ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ বিধিমালা অনুযায়ী ফায়ার এক্সিট, ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টরের (ধোঁয়া শনাক্তকরণ যন্ত্র), সেফটি ট্যাংক নেই। এছাড়াও খুলনার বড় বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বিপনী বিতানগুলোতে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় কনটিনজেন্সি প্ল্যান রাখা জরুরি হলেও সেই ব্যবস্থা নেই।
সূত্রমতে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাতে নগরীর খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেটে অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেটের তিনটি দোকান পুড়ে যায়। আবার, গত ৫ অক্টোবর খুলনার বড় বাজারের ডেল্টাঘাট এলাকায় আগুনে সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এ দুর্ঘটনায় অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। একই বছরের ২৮ ফেব্র“য়ারি দুপুরে খুলনা শপিং কমপ্লেক্স লাগোয়া রহিমা কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট আধাঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই রাতে রেলওয়ে হাসপাতাল রোডে (নিক্সন মার্কেট) অবস্থিত মানিক মিয়া শপিং কমপ্লেক্সের এলাহি ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৬৮ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও সচেতন হচ্ছে না ব্যবসায়ীরা।
বিভাগীয় সদর খুলনার প্রাণকেন্দ্রের বড় বাজার, বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বিপনী বিতান ও বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো টুটপাড়া ফায়ার স্টেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন। 
এ স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, “অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ, প্রতিকার ও নির্বাপক ব্যবস্থায় যা যা প্রয়োজন, খুলনার মার্কেটগুলোতে তার কোনটাই নেই বললেই চলে। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছি, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি, টানা গেল কয়েকটি বড় বাজারে মাইকিং করছি অগ্নিকান্ডের প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে। সরেজমিনে খুলনার মার্কেটগুলো পরিদর্শন করে প্রতিদিন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করছি।”
তিনি আরও বলেন, খুলনা শপিং কমপ্লেক্স, খুলনা বিপনী বিতান, চাঁদনী চক সুপার মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, নান্নু সুপার মার্কেট, আব্দুল জব্বার মার্কেট, হ্যানিম্যান মার্কেট, খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট, হার্ডমেটাল গ্যালারী, এস এম এ আব্দুর রব মার্কেট, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী বিপনী বিতান, হেরাজ মার্কেট, বড় বাজারের ওয়েস্ট মেকড রোড, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড, হেলাতলা রোড, কালীবাড়ী রোড, ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোডের একাংশ ও স্টেশন রোড অগ্নিকান্ডের জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ফায়ার সার্ভিস এ কর্মকর্তা আরও বলেন, এসব মার্কেটে ঢোকার পথ সরু। দিনরাত রাস্তার দুই ধারে ভিড় করে থাকেন হকার ও ক্রেতারা। বেশির ভাগ পুরনো মার্কেটের বাইরেই এমন দৃশ্য। এই ভিড় ঠেলে ভেতরে যেতে বেগ পেতে হয়। তাছাড়া মার্কেটগুলোর মধ্যে কোন পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সে কারণের কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তার ব্যাপক পরিধিও হতে পারে। অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবসায়ীদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে বলে প্রথম পরামর্শ তার।
সূত্রমতে, বড় বাজারসহ এর আশপাশে ছোট-বড় দশ সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব ধরনের পোশাক, ওষুধ, পণ্য ও খাদ্য দ্রব্য পাইকারি বেচাকেনার পাশাপাশি খুচরা বিক্রি হয়। যে কারণে ঈদের বাজারে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতয়াত হয় এই এলাকায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ সময়ের খবরকে বলেন, “সপ্তাহব্যাপী খুলনার প্রতিটি মার্কেটে সচেতনতামূলক মাইকিং, পোস্টারিং ও ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ সভা করেছি। কেসিসি’র ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো তো অপসারণ করা হয়নি, তাছাড়া মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই-ই।
তিনি আরও বলেন, আমরা একাধিকবার বলে আসছি বড়ধরনের অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার বড় বাজার। এ বাজারের মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রী নেই। ফায়ার সার্ভিস এসব মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া চালাতে চাইলেও ব্যবসায়ীরা তাতে রাজি হন না। আশপাশের মার্কেটগুলো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ