খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকাশে সহায়ক রমজান

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গণী |
০২:২০ এ.এম | ২০ এপ্রিল ২০২৩


মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকাশের জন্য সহায়ক রমজান। রোজা পালনের মাধ্যমে ধনীরা গরিবের দুঃখ বুঝতে পারে, ক্ষুধা-তৃষ্ণার জ্বালা অনুভব করতে পারে। অসহায় নিরন্ন মানুষের ও খাদ্যের সম্মান বুঝতে পারে। রোজা পালনের মধ্য দিয়ে অন্নহীন গরিব মানুষ একমুঠো খাবারের জন্য অন্যের দ্বারে হাত পাতে কেন, তা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারে। এটুকু অনুভূতি জাগ্রত হওয়াই রোজা ও রমজানের বড় শিক্ষা।
সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য রমজান মাসে দান-খয়রাত, ফিতরা-যাকাত ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো কখনো অনেকে এ মহতী কাজেও অনেকে ভুল পদক্ষেপ নেন। রমজান এলে কোথাও কোথাও দেখা যায়, অনেক কাপড় ব্যবসায়ী অসম্মানজনকভাবে যাকাতের কাপড় বিক্রির ব্যানার ঝুলান। বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছু কম দামি নিম্নমানের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি বিক্রি করেন। কোনো কোনো যাকাতদাতাও এমন আছেন, যাঁরা এগুলো কিনে যাকাত হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন। যাঁরা এসব করেন, তাঁরা প্রথমত যাকাতকে অসম্মান করেন। দ্বিতীয়ত, যাকাতদাতাকে হীন কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন, যা অনৈতিক।
হাদিস শরিফে আছে, ‘মন্দ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী অনুরূপ মন্দ কাজের সমান প্রতিফল পাবে এবং ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী সেরূপ ভালো কাজ করার সমান সুফল পাবে।’ যেসব যাকাতদাতা এ ধরণের নিম্নমানের শাড়ি-লুঙ্গি যাকাত হিসেবে দিচ্ছেন, তাঁরা একদিকে যাকাতকে অসম্মান করছেন, অন্যদিকে যাকাত গ্রহীতাকেও অমর্যাদা করছেন। সব মিলে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম খোদায়ি বিধান যাকাতের অবমাননা হচ্ছে আর মানবতার সঙ্গে উপহাস করা হচ্ছে। সর্বোপরি ইমান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ একটি মৌলিক ইবাদতে ছল-চাতুরির মাধ্যমে খেলতামাশায় পরিণত করা হচ্ছে। রমজানের মূল লক্ষ্য মানব ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাচ্ছে।
সদকা ও যাকাত এমনভাবে দেওয়া উত্তম, যা গ্রহীতা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মুদ্রা বা টাকাই অগ্রগণ্য। কেননা, এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচি ও ইচ্ছেমতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। কোনো কাপড়-চোপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দিলে ব্যবহার উপযোগি মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত।
ফরজ ইবাদত যাকাত করুণার দান নয়, দয়া-দাক্ষিণ্যও নয়; এটি বঞ্চিতদের পাওনা অধিকার। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেছেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে বঞ্চিত-লাঞ্ছিতদের নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে (সূরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৯; সূরা-৭০ মাআরিজ, আয়াত: ২৪-২৫)।’ 
পাওনাদারের টাকা দিয়ে পাওনাদারকে নিম্নমানের কিছু কিনে দেওয়া ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কী? কোরআন কারিমে আলাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত কল্যাণ পাবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস দান করবে। আর তোমরা যা দান করো, আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত (সূরা-৩ আল ইমরান, আয়াত: ৯২)।’ যেহেতু এটি তার পাওনা, সুতরাং প্রাপককে তার পাওনা সসম্মানে প্রদান করতে হবে; যাতে তিনি তা পেয়ে সন্তুষ্ট হন। যাকাত প্রদান করা ফরজ ও সদকা আদায় করা ওয়াজিব; কিন্তু কোনো মানুষকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, কারও সম্মানহানি করা নাজায়েজ ও হারাম কাজ।
যাকাত, সদকাতুল ফিতর ও যেকোনো ফরজ ওয়াজিব সদকা, যা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে হয় এবং যেসব শুধুই গরিবের হক; সেসব প্রদান করার ক্ষেত্রে গ্রহীতাকে এমন বলার প্রয়োজন নেই, ‘এটা যাকাত’ বা ‘এটা ফিতরা’। এমনভাবে বলা উচিত নয়। কেননা, এতে গ্রহীতা লজ্জিত, অপমানিত বোধ করবেন। শুধু ফরজ ওয়াজিব দান নয়, বরং নফল দান-খয়রাতের মাধ্যমেও কাউকে অসম্মান করা যাবে না। আল­াহ তাআলা বলেন, ‘উত্তম কথা ও ক্ষমা সেই দান অপেক্ষা উত্তম, যার সঙ্গে অনুগামী হয় যন্ত্রণা। আর আল্লাহ তাআলা ধনী ও সহিষ্ণু (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৬৩)।’ 
সদকা ও যাকাত এমনভাবে দেওয়া উত্তম, যা গ্রহীতা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মুদ্রা বা টাকাই অগ্রগণ্য। কেননা, এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচি ও ইচ্ছেমতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। কোনো কাপড়-চোপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দিলে ব্যবহার উপযোগি মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত। 
লেখক : যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

্রিন্ট