খুলনা | মঙ্গলবার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১ আশ্বিন ১৪৩২

সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা ঈদুল ফিতরে

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:৪২ এ.এম | ২১ এপ্রিল ২০২৩


‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ কবির ভাষায়, ‘আজ ঈদগাহে নেমেছে নতুন দিন, চিত্তের ধনে সকলে বিত্তবান, বড়-ছোট নাই, ভেদাভেদ নাই কোনো, সকলে সমান, সকলে মহীয়ান।’ বাস্তবিক পক্ষেই ধনী-গরীব, শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক, প্রৌঢ়-বৃদ্ধ; এক কথায় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের মাঝেই অনাবিল আনন্দের ঢেউ তোলে এই ঈদ। 
ঈদ শুধু ফূর্তির নাম নয়। এটি যেমন আনন্দ-উৎসব, তেমনি ইবাদতও বটে। ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় আমল সমূহের মধ্যে রয়েছে:  ১. যতদূর সম্ভব অতি প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করা। ২. নিজ মহল­ার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করা। ৩. মিসওয়াক করা ও সকাল সকাল গোসল করা। ৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা ও চোখে সুরমা লাগানো। ৫. সদাকাতুল ফিতর নামাযের পূর্বেই আদায় করা। ৬. নিজের সাধ্যানুযায়ী উৎকৃষ্ট তথা পবিত্র, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করা। ৭. খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা। ৮. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে হালকা নাশতা করা, আর ঈদুল আযহার নামাজের পূর্বে কোন প্রকার আহার গ্রহণ না করে নামাযের পর যথাশিগগিরই সম্ভব পশু কুরবানী করে সেই গোশ্ত দ্বারা আহার করা। ৯. মিষ্টি জাতীয় ও বিজোড় সংখ্যার খেজুর দিয়ে এই নাশতা করা। ১০. সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দান-সদকা করা। ১১. যথাশিগগিরই প্রত্যুষে ঈদগাহে গমন করা । ১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। ১৩. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া এবং অপর পথে ফিরে আসা। ১৪. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় চুপে চুপে তাকবীর পাঠ করা, আর ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদের দিন উচ্চস্বরে উক্ত তাকবীর পাঠ করা। ঈদের তাকবীর হলো, আলাহু আকবার, আলাহু আকবার, লা-ইলাহা ইলাল­াহু, আল­াহু আকবার, আল­াহু আকবার, ওয়ালিল­াহিল হামদ। ১৫. ঈদুল ফিতরের দিনে ফজরের ফরজ নামাজের পরে  ঈদের জামাত পর্যন্ত আর কোন সুন্নত বা নফল নামাজ না পড়া।  ১৬. ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া সুন্নত। তবে যদি বৃষ্টি-বাদল হয় তাহলে মসজিদে আদায় করা যায়। ১৭. সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম খাবারের বন্দোবস্ত করা এবং প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব, গরীব-মিসকীনকে পানাহার করানো। 
যে সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা যায় সে রাতকে ঈদের রাত বলা হয়। এটাকে পুরস্কার বিতরণের রজনী বলা হয়। আমরা অনেক সময় ঈদের নতুন চাঁদ দেখে সব কিছু ভুলে যাই, ইবাদতের কথা আর মনে থাকে না। অথত ঈদের রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, যদি কোন ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত জেগে ইবাদত করে তাহলে যে দিন অন্যান্য দিলো মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না অর্থাৎ কিয়ামতের দিনের আতঙ্কের কারণে অন্যান্য লোকের অন্তর ঘাবড়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যাবে, কিন্তু দুই ঈদের রাত্রে জাগরণকারীর অন্তর তখন ঠিক থাকবে (তাবারানী, ইবনে মাজাহ)। সুতরাং ঈদের দিন রাতেও আমাদের বেশী বেশী ইবাদতে মশগুল থাকা উচিত। হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে, অর্থাৎ সাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখবে সে পূর্ণ এক বছরের রোজার ছওয়াব পাবে। এই জন্য এই ছয়টি রোজা খুবই ফজিলতপূর্ণ। 
ঈদের ময়দানে রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব, উঁচু-নিচু, সাদা-কালো কোন ভেদাভেদ নেই। এ যেন কবির সেই বাণীকেই স্মরণ করিয়ে দেয়, ’ধনী-গরীব নেই ভেদাভেদ, সমান সবে আাজি / আজ মিলনের বেহেশতি সূর, উঠছে সদা বাজি।’ প্রকৃত অর্থেই স¤প্রীতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দিয়ে যায় ঈদুল ফিতর। উৎসবের আনন্দধারা সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়াই এই পবিত্র দিনের মর্মকথা।
লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনী থেকে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ

ইসলাম

প্রায় ৩ মাস আগে

ইসলাম

প্রায় ৩ মাস আগে