খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

বাই বাই পরীক্ষা ভীতি

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট |
০২:২৫ এ.এম | ২৫ এপ্রিল ২০২৩


কেস স্ট্যাডি-(১) রাজমান, বয়স-১৩ বছর। পরীক্ষা যখন সামনে সমাগত হয়, তখন সে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভাল স্ট্যাডি থাকা সত্তে¡ও পরীক্ষা সামনে এলে সে প্রায় মনে করে যে, তার ফেল করার সম্ভাবনা খুব বেশি। তার ভিতর আরো মনে করার প্রবণতা তৈরি হয় যে, সব কিছু জানা সত্তে¡ও পরীক্ষার কক্ষে সঠিক ভাবে লিখে আসতে ব্যর্থ হবে।
কেস স্ট্যাডি-(২) শিপন, বয়স-১৫ বছর। পড়াশোনায় বেশ আন্তরিক। কিন্তু  বিপত্তি অন্য জায়গায়। পরীক্ষা এলে তার উদ্বিগ্নতার মাত্রা খুব বেড়ে যায়। পরীক্ষার কয়েক দিন পূর্ব হতে সে ঠিক মত আর টেবিলে পড়তে বসতে পারে না। পরীক্ষার পূর্বে তার খাওয়া-দাওয়া কমে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। মানুষের সাথে এমন কি পরিবারের লোকদের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দেয়।
উপরের দু’টি ঘটনা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি সংক্রান্ত বিষয়কে নির্দেশ করে। ছাত্র জীবনে যে বিষয়টি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ভয় পায়; তা হলো ‘পরীক্ষা’। পরীক্ষা মানেই একটু বাড়তি চাপ, যার প্রভাব সবার নিকট সমান ভাবে বিরাজমান নয়। পরীক্ষা সংক্রান্ত চাপ হতে অনেকের ভিতর তৈরি হয় পরীক্ষার ভীতি।
পরীক্ষা ভীতির শরীরবৃত্তিয় কারণ: শিক্ষার্থী মাত্রই পরীক্ষার সময় স্বাভাবিক ভাবে এক প্রকার মানসিক চাপ অনুভব করে। এই মানসিক চাপ বেশি মাত্রায় অনুভূত হলে ‘হাইপোথ্যালামাস’, ‘পিটুইটারি গ্রন্থি’ এবং ‘এড্রেনাল কটেক্স’-এই সংগঠনটি একত্রে অতি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে ব্যক্তি বেশি মাত্রায় আবেগিয় অবস্থা অনুভব করে। আবার ব্যক্তি যখন অতিমাত্রায় মানসিক চাপ বোধ করে, তখন ব্যক্তির শরীরের অভ্যন্তরে বেশি মাত্রায় ‘কর্টিসোল’ নামক হরমোন ক্ষরণ হয়। ফলে ব্যক্তির মধ্যে এক প্রকার ভীতি পরিলক্ষিত হয়। 
পরীক্ষার ভীতির মনস্তাত্তি¡ক ও অন্যান্য কারণ: 
(!) পরিবেশগত কারণ: (১) পিতা-মাতা যখন সন্তানের উপর ফলাফল সংক্রান্ত অত্যাধিক প্রত্যাশা প্রয়োগ করেন। (২) পিতা-মাতা যখন সন্তানের পরীক্ষার ফলাফলকে সামাজিক মর্যাদার মানদন্ড হিসেবে গণ্য করেন। (৩) পিতা-মাতা যদি প্রায় সময় সন্তানকে অন্য শিক্ষার্থীর সাথে তুলনা করে থাকেন। (৪) ফলাফল সংক্রান্ত শিক্ষকের বিরূপ মন্তব্য বা শিক্ষক সংক্রান্ত অন্য কোন সমস্যা।
(!!) পাঠ সংক্রান্ত সমস্যা: (১) অনিয়মিত পড়া, (২) পরীক্ষার পূর্বে সারা রাত্র জেগে পড়া, (৩) ট্রপিক্স এর অর্থ না বুঝে মুখস্ত করা, (৪) সঠিকভাবে রিভাইস না দেওয়া, (৫) পড়ার বিষয় মনে করতে ব্যর্থ হওয়া, (৬) রিভাইজিং নোট তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া;
পরীক্ষা ভীতির মনস্তাত্তি¡ক কারণ: শিক্ষার্থী কর্তৃক: (১) পরীক্ষা সংক্রান্ত নেতিবাচক চিন্তা, (২) পরীক্ষা সংক্রান্ত আত্মবিশ্বাসের অভাব, (৩) পরীক্ষা ও ফলাফল সংক্রান্ত অযৌত্তিক চিন্তা, (৪) যদি ফেল করি, তবে মান সম্মান নষ্ট হবে- এরূপ অযৌক্তিক চিন্তা, (৫) ১০০% সঠিক ফলাফল প্রাপ্তির আশা নতুবা আমি মূল্যহীন হয়ে পড়বো-এরূপ অযাচিত চিন্তা। 
পরীক্ষা ভীতির শারীরিক প্রকাশ: (১) পরীক্ষার ভয়ে : শিশুর বুক ধড়ফড় করা, (২) খাবারে অরুচি দেখা দেওয়া, (৩) ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া, (৪) ক্ষেত্র বিশেষ বমি বমি ভাব দেখা দেওয়া, (৫) পরীক্ষার সময়ে প্রচুর ঘাম হওয়া, (৬) পরীক্ষার ভয়ে মুখ কিছুটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠা, (৭) শ্বাস-প্রশ্বাস ছোট হয়ে যাওয়া।
শিশুর পরীক্ষার ভীতি দূর করতে মা-বাবার করণীয়: (১) বাসায় পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন: পড়ার সময় শিশুকে একটি কোলাহলমুক্ত পরিবেশ উপহার দেবার চেষ্টা করা। এতে করে শিশুটির পড়ার মনোযোগ বিধানে সহায়তা করবে। (২) শিশুর মনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করুন: ‘তুমি পারবে’- এমন একটি উক্তি শিশুর মনোবল তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক। যা পরীক্ষার ভীতিকে দূর করতে যথেষ্ট সহায়ক। (৩) শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: শিশুর ঘুমের ঘাটতি তার মনোযোগ বিচ্ছিন্নতার একটি অন্যতম কারণ। সুতরাং প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ হতে ৮ ঘন্টা শিশুর ঘুমের ব্যবস্থা করুন। এতে তার মন শান্ত থাকবে। (৪) পড়ার মাঝে শিশুটিকে বিরতি দিন: শিশুটিকে পড়ার মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে তার সাথে গল্প করুন কিংবা মাঝে মাঝে প্রিয় কার্টুন দেখতে দিন। এতে তার মানসিক চাপ কমবে।
পরীক্ষার্থী কর্তৃক অনুকরণীয় : (১) সময়মত রিভাইস দিতে হবে। (২) পরীক্ষার পূর্বে হালকা খাবার খেতে হবে। (৩) রুটিন অনুযায়ী পড়তে হবে। (৪) পড়ার মধ্যে মাঝে মাঝে বিরতি রাখতে হবে। (৫) পরীক্ষার দিন পূর্বে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। (৬) পরীক্ষার পূর্বের দিন সব কিছু গুছিয়ে রাখতে হবে। (৭) পরীক্ষার ভীতি সংক্রান্ত বিষয়কে পরিবারের সদস্যদের সাথে বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ, খুলনা।  প্রয়োজনে: ০১৭১৪৬১৬০০১

প্রিন্ট

আরও সংবাদ