খুলনা | সোমবার | ১৮ অগাস্ট ২০২৫ | ২ ভাদ্র ১৪৩২

চার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন ওসির মোংলা থানায় যোগদান

মাহমুদ হাসান, মোংলা |
১১:৪৮ পি.এম | ০৯ মে ২০২৩


চতুর্মুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন যোগদান করেছে মোংলা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ সামসুদ্দীন। ৪ মে সকালে তিনি থানায় যোগদান করেন। এর আগে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে তিনি রামপাল থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে মোংলা থানায় যোগদানের পর বিভিন্ন মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা। মোংলার বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর আর সততা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারবেন তো তিনি ? ইতিপূর্বে এ থানায় দায়িত্বে থাকা অফিসারদের কার্যক্রম অনুসরণ করে তিনি যেন এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিরীহ ও অসহায় মানুষের পাশে থাকেন এ দাবি সাধারণ মানুষের। 
পুলিশ একটি সেবামূলক বাহিনী। থানার একজন অফিসার ইনচার্জের কাছে সাধারণ মানুষ অনেক কিছুই আশা ও ভরসা করে। অসহায় মানুষগুলো বিপদে পড়লে অথবা কোন জায়গায় স্থান না পেলে তখনই আশ্রয় নিতে যায় থানা পুলিশের কাছে। কিন্তু প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা সেই অসহায়ত্বটাকে পুঁজি করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে গরিব ও সহজ সরল মানুষদের হয়রানি করে থাকে। তখন কোন জায়গায় ঠাঁই না পেয়ে মনের চাপা কষ্ট নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না এ সকল মানুষগুলোর। তিনি প্রশাসনের এমন একজন কর্মকর্তা-উপজেলার সকল বিষয়ই তার পদচারণার প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহলের সকলেই। আর এ চ্যালেঞ্জগুলো শক্ত হস্তে মোকাবেলা করতে পারলেই তিনি হবেন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয়জন। 
প্রথমত, বহুদিন থেকেই মোংলা উপজেলাব্যাপি চলছে মাদকের ছড়াছড়ি। শহর থেকে শুরু করে তা এখন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যা নিয়ন্ত্রণ বা দমন করতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ, কোস্টগার্ড বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও বড় বড় গডফাদাররা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ মাদকের পিছনে রয়েছে বেশ প্রভাবশালীদের হাত। তারাই প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল ঘাট-অঘাট সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেককেই দেখা গেছে মিছিলের সামনে থেকে মাদক মুক্ত মোংলা চাই শ্লোগান দিতে, অথচ-তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্য শহর থেকে মাদকের চালান আনা-পাচার বা বিক্রির ব্যাপারে পুরো মোংলা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাহলে কিভাবে গড়া হবে মাদক মুক্ত মোংলা। যুব সমাজকে রক্ষা করতে এটাই হলো তার প্রথমত চ্যালেঞ্জ, যা ওসির কাছে আশা করছে এখানকার মানুষ।
দ্বিতীয়ত-মোংলা বন্দর দেশের একটি বড় সমুদ্র বন্দর, যেখানে দেশী-বিদেশী আমদানিকারকরা বানিজ্যিক জাহাজ বোঝাই করে পণ্য আনা-নেয়া করছে। আর এখানে বন্দর কেন্দ্রিক গড়ে উঠছে একটি পণ্য পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্র। যেমনঃ গম, চাল, সার, কয়লা, তেল ও মেশিনারিজসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশী-বিদেশী পণ্য পাচারের সাথে জড়িত তারা। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য পাচারের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হলে আন্তর্জার্তিক পরিমন্ডলে মোংলার সুনাম নষ্ট হয়ে থাকে। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এর পিছনেও রয়েছে একটি বড় প্রভাবশালী গ্র“প। তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় অহরহ পাচার হচ্ছে এসব পণ্য, যা এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে এ পাচারকারীরা। এছাড়া, সুন্দরবনেও রয়েছে বন্যপ্রাণি ও বিশাল বনজ সম্পদ। তাই এখানকার পণ্য ও বনজ সম্পদ পাচার রোধে পুলিশের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। 
তৃতীয়-মোংলা উপজেলা জুড়ে ব্যক্তি মালিকাধীন জমি-জমা নিয়ে রয়েছে একটি বড় সমস্যা। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে এ নিয়ে চলে বিশাল ক্ষমতার বাণিজ্য। কার জমি কে দখল করবে, কে কোন দলের সমর্থক বা কে কি করেছিল তাই নিয়ে চলে প্রতিহিংসা। আর এ অঙ্গণেও ক্ষমতাবানদের প্রতিযোগিতার রাজত্ব বেড়ে যায়। একটি কথা প্রচলন আছে “ক্ষমতা যার-জমি বা ঘের তার” যার যত ক্ষমতা, সে ততো জমি বা মৎস্য ঘেরে মালিক হবে, এমনটাই চলে আসছে বহু দিন থেকে। আর তখনই নিরীহ ও সহজ সরল মানুষগুলো পরে যায় মহা-বিপদে। সম্প্রতি এ অঞ্চলের জমির দাম ১০/২০ গুণ বেড়ে যাওয়া আরো বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পক্ষপাতিত্বের কারণে অনুপায় হয়ে আশ্রয় নিতে যায় পুলিশ প্রশাসনের কাছে। সেখানেও যদি প্রতারিত হতে হয় তখন তাদের যাওয়ার জায়গা থাকে শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে। এছাড়া উপায় কি? এ অসহায় মানুষগুলোর।
চতুর্থ-রাজনৈতিক অস্থিরতা। বর্তমানে কিছু সুবিধাভোগী রাজনৈতিক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। আগে অন্য দলের নেতা বা সমর্থক ছিল, এখন পিঠ বাঁচানো দায়ে বর্তমান রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছে। এরাই এখন দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার করতে উঠে পরে লেগেছে। আর তাদের দিয়ে কিছু অসাধু নেতা-কর্মীরা ফায়দা লুটছে। হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে দলকে বিপদে ফেলতে অনেকেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কে কত টাকা বা গাড়ী-বাড়ির মালিক হওয়া যায়। আর এ কর্মকান্ডে দলের মধ্যে দেখা দেয় গ্র“পিং কোন্দলসহ নানা রাজনৈতিক জটিলতা। তখনই শুরু হয় কোন গ্র“পের ক্ষমতা কতটুকু। আর সেই ক্ষমতার প্রভাব খাটানোর মধ্যে পড়ে নিঃস্ব হতে হয় নিরীহ সহজ সরল মানুষগুলো। তাই প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিকসহ নানা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রশাসনকেও পড়তে হয় বিপাকে। আর সেখানেও পুলিশের ভূমিকা রয়েছে অপরিসীম। তবে সাধারণ মানুষেরা বলছে, এ বহু মাত্রিক সমস্যা সমাধানে পুলিশ প্রশাসনকে হতে হবে কঠোর ও পক্ষপাতহীন। তা হলেই স্বস্তি ফিরবে সাধারণ খেটে খাওয়া সহজ সরল মানুষদের মাঝে। তার পরেও বর্তমান মোংলা থানায় সদ্য যোগদান করা অফিসার ইনচার্জকে অভিনন্দন জানিয়েছে এখানকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা। তিনি এ সকল চ্যালেঞ্জগুলো কঠোর হস্তে দমন ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ নিজের কার্য পরিচালনা করবে আর অসহায় মানুষগুলোর আশ্রয়দাতা ও সার্বিক সহযোগিতা করবে এমনটাই মনে করেন অনেকেই। 
নতুন যোগদান করা ওসি তিনি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করণে। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। গতকাল বিকেলে সংবাদকর্মীদের সাথে পরিচিতি পর্বে থানার নতুন অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ সামসুদ্দীন বলেন, পুলিশ একটি সেবামূলক বাহিনী। আপনাদের সকলের সহযোগিতা পেলে মোংলা এলাকাকে মাদক, চোরাচালান, জমি দখল ও সন্ত্রাস মুক্ত করতে চাই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল দেশ গড়তে সহায়তা সহ সকলে মিলেমিশে একসাথে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করতে হবে। তাই দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন মোংলা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সামসুদ্দীন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ