খুলনা | রবিবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

|
১২:৫০ এ.এম | ১২ মে ২০২৩


গত কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গণে সহিংসতার ঘটনা বেশ দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেমন তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হতাহতের ঘটনা খবরে উঠে আসছে, তেমনই সামাজিক নানা সহিংসতাও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে বরগুনার আয়লা পতাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম পনুকে পূর্বশত্র“তার জের ধরে প্রতিপক্ষ কুপিয়ে হত্যা করে। রাতে চোখের সামনে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে তার মেয়ে পরদিন সকালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায়। স¤প্রতি তৃণমূলে এমন রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বাড়ছেই। এক পরিসংখ্যান বলছে, দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য, রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর কারণে শুধু চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ১০২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এমন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক সহিংসতাও। মে মাসের দ্বিতীয় দিন নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় প্রেমের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে দশম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় এক বখাটে। গত সোমবার রাতেও গাজীপুরের সালনা এলাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাসায় ঢুকে এক কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে সেই বাসাতেই শিক্ষকতা করা এক মাদ্রাসা শিক্ষক। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর মা ও এক বোনকেও কুপিয়ে জখম করে সে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, নেত্রকোণায় স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার ২৫ ঘণ্টা পর মামলা হয়।
তবে সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, একটি হত্যাকান্ড বা অপরাধ সংঘটিত হলে জনগণকে অপরাধীর শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়। কিন্তু অপরাধ যখন ঘটে, তখন অপরাধীকে গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া রাষ্ট্র ও প্রশাসন যন্ত্রের দায়িত্ব। উপযুক্ত বেতন-ভাতা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাখা হয়েছে এ উদ্দেশ্যেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের কাছে দাবি জানাতে হবে কেন? আর শুধু হত্যাকান্ড সংঘটিত হলেই কেন প্রশাসনকে নড়েচড়ে বসতে হবে? দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ রয়েছে। ফলে পুলিশ যদি কালক্ষেপণ না করে সময়মতো অপরাধের নির্ভুল তদন্ত করে আদালতে দ্রুত চার্জশিট জমা দেয়, তাহলে অপরাধের বিচার হবে। অপরাধীও উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে, হত্যাকান্ড বা ধর্ষণের মতো বড় অপরাধ সংঘটিত হলেও অপরাধী সহজে ধরা পড়ে না। ধরা পড়লেও পুলিশ তদন্ত ও চার্জশিট দিতে দীর্ঘ সময় নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চার্জশিট থাকে দুর্বল, পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয় না। এর সুবিধা নিয়ে অপরাধী খালাস পেয়ে যায়। আর ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয় ভুক্তভোগী বা বিচারপ্রার্থী। হত্যার মতো বড় ধরণের অপরাধ সংঘটিত হলেই তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়; কিন্তু এর বাইরেও অপরাধের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২২৫টি শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। অনলাইনে অশ্লীল, যৌন হয়রানিমূলক সহিংসতার কথা না হয় বাদ থাকল। হত্যাকান্ড-ধর্ষণ ইত্যাদি বড় অপরাধের ক্ষেত্রে যদি দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়, অপরাধীকে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যায়, তাহলে অপরাধীরা ভয় পাবে, দেশে অপরাধ নিশ্চিতভাবেই কমে যাবে।

্রিন্ট