খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

জাল সনদের অবৈধ কর্মকান্ড রোধ করা জরুরি

|
১২:৩২ এ.এম | ১৫ মে ২০২৩


অনলাইনে ও সেলফোনে রীতিমতো এসএমএস পাঠিয়ে জাল সনদ তথা ভুয়া সার্টিফিকেটের ব্যবসা খুলে বসেছে একটি চক্র। চক্রটি অনেকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদ বানিয়ে বিক্রি করে আসছে। ইতোমধ্যে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। ডিবিপুলিশ সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত নারীসহ ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে লালবাগ ও রামপুরার ভাড়াবাসা থেকে। উদ্ধার করেছে কম্পিউটার ও প্রিন্টারসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহকৃত মূল কাগজ, বিপুল সংখ্যক রাবার স্ট্যাম্প, সিলমোহর ইত্যাদি। ধৃত চারজনের মধ্যে একজন ইতোপূর্বে বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ছিলেন। কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অবৈধ ক্যাম্পাস এবং জাল বা ভুয়া সনদ বিক্রির অভিযোগে এর যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ধৃতদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডের বেশ কয়েকজন পদস্থ ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা জাল সনদ ও মার্কশিটের অনলাইন ভেরিফিকেশন (যাচাই) ও বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ইতোমধ্যেই চক্রটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার সনদপত্র বিক্রি করেছে। প্রশ্ন হলো- অনলাইনে ও মোবাইলে নিয়মিত ম্যাসেজ পাঠিয়ে চক্রটি দিনের পর দিন এ রকম একটি অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে এলেও এতদিন পর্যন্ত তা ডিবি পুলিশের নজরে পড়ল না কেন? প্রসঙ্গত উলে­খ্য, উচ্চশিক্ষার ভর্তিতে এত কড়াকড়িসহ কঠিন শর্ত আরোপ করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছর অর্ধ-শতাধিক ভুয়া শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে, যার মধ্যে আছেন ছাত্রীও।
ইউজিসির হিসেবে দেশের ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সরাসরি ভর্তি করা হয় ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেগুলোর আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো। এর বাইরে রয়েছে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। হাতেগোনা কয়েকটি বাদে অধিকাংশের লেখাপড়া মানসম্মত নয়। শিক্ষকসহ ক্লাসরুম পর্যন্ত নেই। তদুপরি রয়েছে গুচ্ছের খরচ, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আয়ত্তের বাইরে। মূলত এই শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই বেপরোয়া হয়ে ছোটে জাল সনদ ও মার্কশিটের সন্ধানে। মোটকথা, যে কোনো মূল্যে একটি সার্টিফিকেট কিনে চাকুরি জোগাড় করা। বলাবাহুল্য, সেখানেও চলে দুই নম্বরি কার্যক্রম। যে কোনো মূল্যে এই অবৈধ পথ ও প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে না পারলে এক কথায় দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
এমনিতেই দেশের উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বহির্বিশ্বে। এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বুয়েট ঢাবিসহ বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের উচ্চশিক্ষার এই মানগত অবস্থান কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক হতে পারে না। অস্থির রাজনীতির কালোছায়া পড়েছে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। শিক্ষক রাজনীতিও প্রশ্নবিদ্ধ। ভিসিদের নীতি-নৈতিকতা-দুর্নীতিসহ মান নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর আদর্শগত রাজনীতি বাদ দিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিও কাম্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হলে জাল সনদ, ভুয়া ভর্তিসহ শিক্ষা-বিরুদ্ধ এমন সব কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করা আবশ্যক।

্রিন্ট

আরও সংবদ