আজ পহেলা জ্যৈষ্ঠ। তীব্র তাপদাহ সয়ে গাছে গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা আম, লিচু, জামরুল, কাঁঠাল, সৌরভ ছড়ানো বাঙ্গি আর কৃষ্ণচুড়া সোনালু, গগণচুড়ার বর্ণিল আবির ছড়িয়ে যাত্রা শুরু হলো গ্রীষ্ম দুহিতা মধুমাস জ্যৈষ্ঠের। শুধু চোখ ধাঁধানো ফুল নয়। চারিদিকে থরে বিথরে সাজানো নানা ফলের সমারোহ। বিশেষ করে ফলের রাজা আম। অন্য কোনো মাসে এক সাথে এত ফলের আধিক্য নজরে পড়ে না। আর সেজন্য জ্যৈষ্ঠকে মধুমাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। চৈত্র বৈশাখের খরতাপের মাঝে চলে আসে অনেক ফল ফলারী। আর জ্যৈষ্ঠে আম লিচুর আগমন দিয়ে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। গ্রীষ্ম মওসুমে খরাক্লিষ্ট মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আল­াহর নেয়ামতের ঝুড়ি থেকে চলে নানা রকমের রসালো শাঁসালো ফল ফলারি। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু হয় আম লিচুকে ঘিরে নানা রকম উৎসব। চলতি মওসুমে গাছে গাছে মুকুল এলেও বৈশাখের শেষ দিকে তীব্র ও মাঝারি তাপদাহ বয়ে যায় এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে। চার মাস ছিল বৃষ্টিহীন। ফলে খরতাপ থেকে আম লিচু বাঁচাতে প্রচুর সেচ দিতে হয়েছে। 
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, খরতাপের দাপটে চলি­শ শতাংশ আম, লিচু ঝরে পড়েছে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় আম লিচু। আম চাষিরা তাকিয়ে আছে আবহাওয়ার মতিগতির দিকে। একদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ শঙ্কা জাগালেও তা কেটে যাওয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এখন আর ক’দিন ঝড় বৃষ্টি না হলেই ভালো। মধু মাস শুরু হলেও রসালো শাঁসালো ও বনেদী জাতের আমের স্বাদ নিতে হলে আরো ক’দিন সবুর করতে হবে আম রসিকদের। ভোক্তাদের পরিপক্ব ও বিষমুক্ত আম উপহার দেবার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম পাড়ার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন যাত্রা শুরু হয়েছে গুটি আম দিয়ে। আর বনেদী জাতের মধ্যে এসেছে গুটি গোপাল দিয়ে।
এবার জ্যৈষ্ঠের প্রথমদিন থেকে শুরু হচ্ছে আম পাড়া। শুরুতেই নানা জাতের গুটি আম দিয়ে যাত্রা শুরু করছে। এরপর পর্যায়ক্রমে আসতে থাকবে বনেদী জাতের গোপালভোগ, রানীপছন্দ, ক্ষিরসাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানা নামের আম। বউ সোহাগী, বউ ভোলানা, নবাবপছন্দ, বেগম পছন্দ, হাড়িভাঙ্গা কত নামের আম তার ঠিক নেই। 
এবার খরতাপের মাত্রা একটু বেশি বলে আগে ভাগে কিছু কিছু গাছে আমের রং হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। গরমে আম পেকে গেছে বলে তা নামানোর প্রস্তুতি চলছে। টক মিষ্ট স্বাদের গুটি আম সাধারণত নিম্নআয়ের মানুষের তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে বেশক’টি জুস, জ্যাম, জেলি কোম্পানি তাদের শাখা কারখানা চালু করেছে। ফলে এসব কোম্পানির লোকজন কম দামে সব কিনে নিচ্ছে। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ আমের স্বাদ খুব একটা নিতে পারছে না। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম জ্যৈষ্ঠের এগারো তারিখে। জাতীয় কবির জন্মমাস হিসাবেও জ্যৈষ্ঠ পেয়েছে অন্যরকম মর্যাদা।