খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নির্বাচনি বছরে প্রকল্পের বাহার জনতুষ্টি নয়, জনসেবাই হোক মূল লক্ষ্য

|
১২:১৭ এ.এম | ১৮ মে ২০২৩


নির্বাচনি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মহাসড়ক নির্মাণ ও স¤প্রসারণ খাত মিলে ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ দুই শতাধিক প্রকল্প। এক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব প্রকল্পের জন্য সরকারের হাতে এখন কোনো অর্থের জোগান নেই।
প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন সহযোগি দেশগুলোর সহজ দৃষ্টি আকর্ষণের সুবিধার্থে প্রকল্পগুলো তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম গণমাধ্যকে জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো এডিপিতে যুক্ত থাকলে সরকারের জন্য ভালো হয়। উন্নয়ন সহযোগিদের সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের নাম জানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে পারে।
আমরা জানি, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির গতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ব্যয় সংকোচন অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী ব্যয় কমানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ব্যয় কমাতে যা যা করণীয় তা করা হবে। নির্বাচনে যা হওয়ার হবে উলে­খ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না, যা জনসেবার বদলে জনতুষ্টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অপরদিকে, নির্বাচনের বছরে স্বাভাবিকভাবেই বড় ও অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায় সরকার। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটি হয়তো ভোটের বাজারে জনগণের সমর্থন পাওয়ার লক্ষে ফাস্ট ট্র্যাক খাতের বড় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে চাচ্ছে। কিন্তু চলমান প্রকল্পগুলোর ধীরগতি এবং নির্মাণ ব্যয় সামঞ্জস্যের নামে ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধি দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যে আটটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মাত্র তিনটির কাজ শেষ হবে। এগুলো হলো পদ্মা সেতু, রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। তবে মেট্রোরেলের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ না হলেও চলতি বছরের ডিসেম্বরে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল শুরু করার কথা রয়েছে। বাকি চার প্রকল্প অর্থাৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র/পদ্মাসেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজ এ বছর অর্থাৎ নির্বাচনের আগে শেষ হবে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পগুলোয় দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকবে। কাজেই নতুন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার আশায় সর্বোচ্চসংখ্যক নতুন প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যুক্ত করলেই হবে না; বরং চলমান প্রকল্পগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেসব প্রকল্প থেকে জনগণ কতটা সুফল পাবে তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এমনিতেই রিজার্ভ সংকট রয়েছে,
তার ওপর সামষ্টিক অর্থনীতির সমস্যার সমাধান না করে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে গতি না এনে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পে হাত দিলে স্বাভাবিকভাবেই তাতে অর্থায়নে ঘাটতি দেখা দেবে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে এগোনো প্রয়োজন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ