খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

পানির সংকট সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব

|
১২:২৮ এ.এম | ১৯ মে ২০২৩


নদীমাতৃক ভূ-ভাগ হলেও বাংলাদেশ ক্রমেই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এদিকে বেপরোয়া দখলের কারণে অনেক নদীও মারা যাচ্ছে অথবা শীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে বৃষ্টি ও পানির এই দেশে দিন দিন পানির সংকট বাড়ছে। নিরাপদ পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর দেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশকে দ্রুত দ্বিমুখী প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তা হলো, একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নেমে যাওয়া রোধ করতে হবে এবং অন্যদিকে এই উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। দেশে এখনো ভূপরিস্থ পানির ব্যবহার অত্যন্ত কম। এই পানির দূষণও বেড়ে চলেছে। ভূগর্ভস্থ পানির ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে কৃষির জন্য। বাকি ১০ শতাংশ শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালিতে ব্যবহার হয়- যার ১ শতাংশ মাত্র পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই ১ শতাংশ পানির প্রাপ্যতাও এখন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা এর তিনটি কারণ বলছেন- ১. মাত্রাতিরিক্ত পানি উত্তোলন অর্থাৎ ভূগর্ভ থেকে যত পানি তোলা হয়, এর তুলনায় জমা হয় অনেক কম; ২. বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাটির নিচে পানি জমার হারও কমছে এবং ৩. নগরায়ণের দ্রুত বিকাশ, বড় বড় স্থাপনা ও প্রকল্প নির্মাণ এবং মাটি ঢেকে পাকা আচ্ছাদন তৈরির প্রবণতা।
প্রতিবছর আমাদের ভূগর্ভের পানির স্তর ২-৩ মিটার করে নেমে যাচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, সারাদেশে দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় পানির স্তর নেমে গেছে। মাটির স্তর ভেদ করে বৃষ্টির পানি নিচে নামতে না পারলে ভূগর্ভের পানির বিশুদ্ধতা ও নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে। কারণ মাটির বিভিন্ন স্তরেও দূষণ জমছে এবং পরিশ্র“ত পানির পরিশুদ্ধি এতে বিঘ্নিত হচ্ছে। যেহেতু পানি মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য উপকরণ এবং সুপেয় পানি তার স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক, সেহেতু এর জোগান ঠিক রাখতে সরকারকে এখনই উপযুক্ত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
স্থানীয় সরকার, পল­ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং সরবরাহের কাজটি করে থাকে। প্রায় হাজারখানেক গভীর নলকূপের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরে সরবরাহের পানি সংগ্রহ করা হয়। আর সারাদেশে বেসরকারিভাবে সেচ ও গৃহস্থালির জন্যও গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। চাষের বিলে পানি অবশ্য ধীরে ধীরে চুঁইয়ে নিচে যেতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, একদিকে চাষে উত্তরোত্তর সেচের চাহিদা বাড়ছে এবং অন্যদিকে জনচাহিদার কারণে নগরায়ণের ক্রমবিস্তার ঘটছে। এসব কারণে পানির প্রাপ্তিতে যেমন সংকট হচ্ছে, তেমনি এর দূষণও বাড়ছে। এ দু’টিই জনজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। ফলে পানির সংকট নিয়ে দেরি করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, সরকার সমস্যার গুরুত্ব বুঝে আগামী বাজেটে এই খাতে উপযুক্ত বরাদ্দ দেবে। আর পানির দেশে পানি সংকট যেন কখনো না হয়, এ জন্য ডেল্টা পরিকল্পনায় উপযুক্ত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করি।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ