খুলনা | শনিবার | ১০ জুন ২০২৩ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

সড়কে বিশৃঙ্খলা : জরুরি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন

|
১২:২৪ এ.এম | ২২ মে ২০২৩


দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে কোনো রকম শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। সড়কের মাঝখানে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো হয়। এক বাস কর্তৃক আরেক বাসকে ওভারটেক করার প্রবণতা দেখা যায় সর্বত্র। অন্যদিকে অনেক স্থানে দ্রুতগতিতে চলা যানবাহনকে তোয়াক্কা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায় পথচারীদের।
পথচারীরা একদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পার হন, অন্যদিকে বেপরোয়া চালকরা ট্রাফিক আইন মানেন না। ফলে দু’পক্ষের অসতর্কতার কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। শুক্রবার গণমাধ্যমের প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে-চালকের অনিয়ন্ত্রিত চালনা, পথচারীদের অসচেতনতা, মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে অসতর্কতা, ভিআইপিদের গাড়ি রং সাইডে চলার প্রবণতা ইত্যাদি কারণে সড়কে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির চিত্র। পথচারীবান্ধব অবকাঠামো না থাকাও সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটি বড় কারণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুট ওভারব্রিজ কিংবা জেব্রা ক্রসিং নেই, থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে কিনা অর্থাৎ পথচারীরা ব্যবহার করছেন কিনা, সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি নেই।
পথচারীদের নির্দিষ্ট জেব্রাক্রসিং ব্যবহারের বিষয়টি মূলত আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল। নিয়ম মাফিক যানচলাচলের বিষয়টিও আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত। সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর সরকার সড়ক পরিবহণ আইন তড়িঘড়ি করে পাশ করলেও তা আজও কার্যকর হতে আমরা দেখিনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এর পেছনে রয়েছে শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক প্রভাব।
সড়কে নিয়ম মেনে চলাচলের বিষয়ে যেমন জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন, তেমনি যানবাহন চালকরা প্রশিক্ষিত কিনা, সেটিও দেখভাল করা জরুরি। ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ এসব ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিবছর বাজেটে সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজগুলো দৃশ্যমান হলেও রক্ষণাবেক্ষণ এবং মান উন্নয়নে কার্যত কোনো পদক্ষেপ সেভাবে চোখে পড়ে না। 
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরেই স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের দেশে খোদ রাজধানীর সিংহভাগ সিগন্যালই পুলিশের ইচ্ছামাফিক হাতের ইশারায় পরিচালিত হয় এখনো। এছাড়া ভিআইপিদের যাতায়াতের সময় দীর্ঘক্ষণ সড়ক স্থবির থাকার বিষয়টি তো আছেই। ফলে সময়ের সঙ্গে জীবনের তাল মেলাতে গিয়ে পথচারীরা যেমন একদিকে নিজের অজান্তেই মস্তবড় ঝুঁঁকি নিয়ে ফেলেন, অপরদিকে গণপরিবহণ চালকরাও অর্থলোভে মেতে ওঠেন কে কার আগে যাবেন, এমন প্রতিযোগিতায়। ব্যক্তিগত গাড়ির চালকরাও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেন মাঝে মাঝে। সব মিলে কেউই সড়কের শৃঙ্খলা মানছেন না।
পরিবহণ খাতে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে প্রাণহানি কমানো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ খাতে শৃঙ্খলার যে তিন নিয়ামক অর্থাৎ সড়ক, যানবাহন এবং দক্ষ চালক-এর কোনোটিই ক্রটিমুক্ত নয়। আবার আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এ খাতকে সুশৃঙ্খল রাখার ব্যবস্থাও কার্যকর নয়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব একটি বড় বাঁধা। ফলে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবহণ খাত। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ