খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

মোংলায় ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার নামে সরকারি প্রকল্পের কোটি টাকা হরিলুট, বঞ্চিত পথ শিশুরা

মাহমুদ হাসান, মোংলা |
১১:৩২ পি.এম | ০৯ জুন ২০২৩


ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ কার্যক্রম মোংলায় কাগজ কলমে থাকলেও বাস্তবে তার ভিন্ন চিত্র। কিছ কিছুু জায়গায় সাইনবোর্ড লাগানো ঘর, শিক্ষক আর সুপারভাইজার থাকলেও তদারকির অভাবে তার নেই কোন কার্যক্রম ও স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী। দুইটি এনজিও সংস্থা প্রকল্প দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকা, ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার ঝরে পরা শিশুরা। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন বলছে অভিযোগ পেয়েছি, শিক্ষা নামে অনিয়ম হলে তদন্ত করে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের দেয়া তথ্য মতে, প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মোংলা উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ২ হাজার ১০০ জন ঝরে পড়া শিশুকে শিক্ষা প্রদানের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। সরকারের গৃহিত ৪২ মাসের এ প্রকল্পের জন্য মোংলায় নীড় সেবা সংস্থা ও সিডোপ নামের দুইটি এনজিওর মাধ্যমে ৩৫টি করে ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র খোলা হয়। প্রতিটি শিক্ষা কেন্দ্রে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একজন শিক্ষক ও ৭০টি শিক্ষা কেন্দ্র দেখভাল করার জন্য ১০জন সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসকল শিক্ষকের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার ও সুপারভাইজারের ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে মর্মে নিয়োগ পায় তারা। কিন্ত এ দুই এনজিও পরিচালনায় কর্তা ব্যক্তিরা শিশুদের শিক্ষার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর সুপারভাইজার যারা রয়েছেন তারা শিক্ষা কেন্দ্র তদারকির কথা থাকলেও তা করছে না। 
এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খুপড়ি ঘর আর মাঠের মধ্যে, ডোবার ধারে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো খুলে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এছাড়া বসতবাড়িতে, পরিত্যক্ত দোকানে অথবা গোয়াল ঘরের পাশে খোলা হয়েছে শিক্ষা কেন্দ্র। আবার অনেক কেন্দ্রের শুধু নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড থাকলেও নেই কোন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষা কার্যক্রম। কোন কোন জায়গায় পাঠদান চলছে খুপড়ি ঘরের বারান্দায়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি স্কুল ঘরের ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ১৫শ’ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা গিলে খাচ্ছে এনজিওরা। এ দু’টি এনজিও সংস্থা কেন্দ্র পরিচালনায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরছে বলে অভিযোগ এলাকার অনেকেরই। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ কিন্তু এখনও দেয়া হয়নী শিক্ষক-শিক্ষিকার বা সুপারভাইজারের বেতন-ভাতাদী। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে সরকারের এ প্রকল্পের কার্যক্রম। ঝরে পড়া ওই সব শিক্ষার্থীদের প্রদান করার কথা বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম, পোশাক, স্কুল ব্যাগ, মাসিক ১২০ টাকা করে উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। যার সব কিছুই সরকার প্রদান করবে। কিন্তু এসকল সুযোগ-সুবিধা এনজিও মাধ্যমে হওয়ায় তার অধিকাংশ থেকে বাদ পড়েছে এসকল অসহায় শিশুরা বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের। 
অপরদিকে, শিক্ষক ও সুপারভাইজার মিলে এলাকা থেকে খুঁজে নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী রাখার কথা থাকলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে ২/৩ জন দেখা গেছে। আবার অনেক কেন্দ্রের তালা বদ্ধ রয়েছে বহু দিন থেকে। এছাড়া ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আছে এই প্রকল্পের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রেও। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে এখন কমিশন হিসেবে টাকা নেয়া হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সরকারের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা মিলেমিশেই এসব করছে বলে অভিযোগ করেছে অনেকে।
এ ব্যাপারে নীড় সেবা সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার লিপি ধনী জানায়, সরকারের কাছ থেকে এখনও অর্থ ছাড় না পাওয়ায় শিক্ষক, সুপারভাইজারদের বেতন, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি দিতে না পারায় কার্যক্রম একটু ঝিমিয়ে পড়েছে। আমরা আশা করছি এই মাসের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান হবে। 
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকর দাশ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো জেলা সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো থেকে একটি প্রকল্প যা দু’টি এনজিও সংস্থা বাস্তবায়ন করছে। নীড় ও সিডোপ এনজিও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করছে কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ