খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সোনামনিরা হুঁশিয়ার! মা-বোনেরা সাবধান!! ‘ফেসবুক ড্রাগের চেয়ে মারাত্মক’

এড. এম মাফতুন আহমেদ |
০১:০৯ এ.এম | ১২ জুলাই ২০২৩


মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। নদীতে তুফান। যাত্রীরা শঙ্কিত। মাঝি-মাল­া ভীত সন্ত্রস্ত। সর্বত্রই হতাশা। একরাশ উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। মধ্য গগনে মেঘের তর্জন-গর্জন। তবুও এই গহীন সাগর পাড়ি দিতে হবে। অবিরাম গতিতে নৌকা এগিয়ে চলছে। কোন খাদের কিনারায় এগিয়ে যাচ্ছে কেউ কোন খবর রাখে না। এই জাতি রাষ্ট্রের অবস্থা সত্যিই কী তাই? কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ এতসব বুঝি না। কোন কিছুকে গভীরে যেয়ে ভাবি না। কোনটা খেলে বদ হজম হয়, আবার কোনটা খেলে হজম হয় এসব নিয়ে কেউ ভেবে দেখে না। কিছু একটা পেলেই হলো।
একটি জাতি রাষ্ট্রকে বেগবান করতে হলে তাঁর সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বাতন্ত্র্যতা মূখ্য ভূমিকা পালন করে। যে জাতি তাঁর ইতিহাস ঐতিহ্য, সর্বোপরি তার গোটা সংস্কৃতিকে ভুলে যায়। যে জাতি অপরের ইতিহাসকে লালন করে। উচ্চকিত কণ্ঠে বুকে ধারণ করে। সে জাতি একদিন তাঁর স্বাধীনতাকেও হারিয়ে ফেলে। বিষয়টি অপ্রিয় হলেও এদেশের ১৭কোটি জনগণকে আবারও একটু গভীরে তলিয়ে দেখা ভাল। 
মানুষ এখন বই পড়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। পারিবারিক আড্ডায় বসার প্রবনতা কমে গেছে। সৃষ্টিশীল, চিন্তাশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ থেকে অনেকে দূরে সরে এসেছে। জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য ভুলে গিয়েছে। বেকারগ্রস্ত হতাশাময় অন্ধকার জীবনের দিকে ক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তাই অলস্য জীবনে অনেকে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করেছে। ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তরুণ-তরুণীরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে সময় ব্যয় করাকে বেশি পছন্দ করে। ভার্চুয়াল জগত তাদের চোখের ঘুম প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে। 
এক গবেষণায় দেখা গেছে ইন্টারনেটের নেশার কারনে ঘুম থেকে উঠতে একেকজনের গড়ে দেরি হয় প্রায় ৯০ মিনিট। চিকিৎসকদের মতে, এভাবে দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা চলতে থাকলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ এবং অ্যাংজাইটির সমস্যা। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কম বয়সী রোগী হার্ট এ্যাটাকের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়,তাদের ৯০ শতাংশই পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাতে পারে না। যদিও আমরা বলি সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিক বন্ধন তৈরি করে কিন্তু এই মিডিয়া আমাদের অনেক দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক চর্চা আমিও ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি। তবে নিজের শরীর মনকে বিপন্ন করে নয়। 
ব্যক্তি মর্যাদাকে হত্যা করে নয়। রাষ্ট্রীক কৃষ্টি সভ্যতাকে ধ্বংস করে অপরের কীর্তন গাইতে রাজী নই। ফেসবুক জ্ঞান চর্চার অন্যতম বাহন। সন্দেহ নেই, একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য গোটা সংস্কৃতি এক অপরের মধ্যে লেনদেন হতে পারে। দেশের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে। রাষ্ট্র বা সরকার গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এবার ভেবে দেখুনতো ফেসবুকে এসবের কী কোন চর্চা আছে? রাত নেই, দিন নেই মাদকাসক্তের মত ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ে আছে। অতঃপর পাশ্চত্য সভ্যতার ন্যায় নগ্নতা, বেহায়াপনায় উবে থাকছে। প্রতিটি কমেন্টস বা ছবিতে উচ্চারিত হয় ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার করুণ সুর, চলে একে আপরের বিরুদ্ধে কদার্য এক বিরূপ সমালোচনা। নগ্ন ছবির পরস্পর প্রতিযোগিতা। এসব যৌন সুরসুড়িতে শুধু যে যুব সমাজের চরিত্র হনন হচ্ছে তা কিন্তু নয়, সব বয়সীরা নগ্ন যৌনতার দিকে ঝুকে পড়ছে। দেশীয় সংস্কৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 
একতো চারিদিকে গহীন অন্ধকার। অতঃপর দেশের বিরুদ্ধে চলছে নানামুখী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। যে আগ্রাসন সরাসরি আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে। ফেসবুকে আসক্তে গোটা জাতির মেধা মনন বিপন্ন হতে চলেছে। এ জন্য কী শুধুমাত্র ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দায়ী? মোটেই না। আমি, আপনি, সবাই এসব অপকর্মে কম-বেশী দায়ী।
ফেসবুক পশ্চিমা সভ্যতার জন্য সৃষ্টিশীল। কিন্তু আমাদের জন্য বিপদজনক। একতো পাশ্চত্য সভ্যতার ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি। ‘পপ’ সংস্কৃতি আমাদের প্রায় গ্রাস করেছে। অতঃপর ভারতীয় সংস্কৃতির ছোবলে লণ্ডভণ্ড আজ যুব সমাজ। অলস্য এক সমাজ ব্যবস্থায় তারা উবে আছে। খাওয়া-নাওয়া নেই ফেসবুক নিয়ে পড়ে আছে।
ফেসবুকের সুনামীতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে মা- বোনেরা। ফেসবুক পরকীয়াকে উৎসাহিত করছে। বলা নেই, কওয়া নেই ঘর ভেঙে একজনের হাত ধরে অন্যজন পালিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সমাজ আজ শঙ্কিত। ফেসবুকের কারনে আমাদের দক্ষ জনশক্তি কী শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যাবে? ফেসবুক আসক্তিতে আমাদের যুব সমাজ কী শেষ পর্যন্ত অকর্মণ্য ও অপদার্থে পরিণত হবে? সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হবে। পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে আমরা কী পর্যন্ত মিশে যাবো? তাদের মত আমাদের পরিবার ব্যবস্থা কি ভেঙে খান খান হয়ে যাবে? ভারতীয় ধর্মান্ধ উগ্র সংস্কৃতি শেষ পর্যন্ত কী আমাদের গ্রাস করে ফেলবে? 
এখনও সময় আছে। ফেসবুক আসক্তি থেকে দূরে সরে আসতে হবে। পশ্চিমাদের সৃষ্ট নীরব ঘাতক ফেসবুক আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গিয়েছে। আমাদের দেশে ফেসবুক ড্রাগের মত নেশায় পেয়ে বসেছে। তাদের দেশে এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। 
ইউরোপ বা পশ্চিমা দেশে প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা আছে। তারা সবাই পরিশ্রম করে জীবিকা চালায়। কিন্তু আমরা দিনকে দিন অলসতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কাজ না পেয়ে নীরব ঘাতক ফেসবুকে ডুবে থাকছি। সোনামনিরা হুঁশিয়ার! মা-বোনেরা সাবধান!! মনে রাখবেন সময় গেলে সাধন হবে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ৫ মাস আগে