খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৪৯ পি.এম | ১৯ জুলাই ২০২৩


হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। কোরআন-হাদিসে এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এ মাসের দশম দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। এই দিনের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। বিশেষ করে এই দিন রোজা রাখার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।

আশুরার রোজা সম্পর্কে হাদিস
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এটা সেই দিন—যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (স.) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)

রুবাইয়ি বিনতে মুআউয়িজ ইবনে আফরা (রা.) বলেন, আশুরার সকালে রাসুল (স.) আনসারদের সকল পল্লীতে এই নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি রোজা রাখেনি, সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় সকাল শুরু করেছে সে যেন রোজা পূর্ণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তীতে আমরা ওই দিন রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোজা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (সহিহ বুখারি: ১৯৬০)

আশুরার রোজার ফজিলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি: ১/২১৮)
আশুরার রোজার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী কারিম (স.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ মুসলিম: ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)

আশুরার রোজায় তাওবা কবুল ও গুনাহ মাফ
আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন আল্লাহর রাসুল (স.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ১/১৫৭)

অন্য হাদিসে নবী (স.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি: ১/১৫৮)

আশুরায় দুই রোজা
আশুরার রোজা রাখার ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো- ৯ তারিখ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ দুটি রোজা রাখা। কেননা ইহুদিরা একটি রোজা রাখে। তাদের বৈসাদৃশ্যের জন্য দুটি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব।’ (সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৯)

আশুরার রোজা কবে ২০২৩
২০২৩ সালের পবিত্র আশুরার দিনটি হলো- ২৯ জুলাই, শনিবার। যারা দুইটি রোজা রাখার নিয়ত করেছেন, তারা ২৮ ও ২৯ জুলাই তথা শুক্রবার ও শনিবার রোজা রাখবেন অথবা ২৯ ও ৩০ জুলাই তথা শনিবার ও রোববারে রোজা রাখবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র আশুরা ও আশুরার রোজা সম্পর্কে সচেতনতা দান করুন। আশুরার দিনের মর্যাদা রক্ষা করার, বিদআত থেকে বেঁচে থাকার ও আশুরার আগে-পরে দুদিন রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন। আশুরা

্রিন্ট